.
এক শিল্পীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। পুলিশের দাবি, রাজধানীর বিভিন্ন দেয়ালে আঁকা গ্রাফিতি ‘সুবোধ’-এর রূপকার তিনি। একই সঙ্গে তাঁর দুই সহযোগীকেও আটক করা হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
বৃহস্পতিবার রাতে পুলিশ ওই শিল্পী ও তার সহযোগীদের গ্রেপ্তার করা হয়। তবে পুলিশ এখনও আটক তাঁদের পরিচয় প্রকাশ করেনি। শিল্পী ও তাঁর সহযোগীদের বিরুদ্ধে ভাংচুর, সরকারের বিরুদ্ধে উসকানি ও ষড়যন্ত্রের মতো গুরুতর অভিযোগ আনা হয়েছে।
মামলার আইনজীবী এমএ জলিল এসব অভিযোগের পাশাপাশি তথ্যপ্রযুক্তি আইনের ৫৭ ধারাতেও অভিযোগ এনেছেন ‘সুবোধ’-এর রূপকারের বিরুদ্ধে।
যদিও গ্রাফিত্তিগুলো অফলাইনে করা, তারওপর ৫৭ ধারার প্রয়োগ কেন – এমন বিষয়ে আইনজীবী বলেন, তার সৃষ্টি ফেসবুক ওয়ালে প্রকাশ করার জন্য তিনি অন্যদের উসকানি দিয়েছেন।
সুবোধ-এর রূপকারদের বিরুদ্ধে পুলিশের অভিযান পরিচালনাকারী দলের প্রধান বলেন, ‘এ বিষয়ে অনেকদিন তদন্তের পর আমরা এমন সিদ্ধান্তে পৌছেছি। এটা আন্তর্জাতিক আঁকিয়ে-সন্ত্রাসীদের নেটওয়ার্কে একটি বড় আঘাত।’
‘সুবোধ তুই পালিয়ে যা, তোর ভাগ্যে কিছু নেই, সুবোধ তুই পালিয়ে যা- এখন সময় পক্ষে না, সুবোধ তুই পালিয়ে যা ভুলেও ফিরে আসিস না! সুবোধ, কবে হবে ভোর?…’। এ রকম রহস্যজনক কিছু বক্তব্য তুলে ধরে রাজধানীর আগারগাঁও, মহাখালী ও পুরাতন বিমানবন্দরের দেয়ালে দেয়ালে ‘সুবোধ’ সিরিজের বেশকিছু গ্রাফিত্তি আঁকা হয়েছে।
উসকো-খুসকো চুল-দাড়ির পাগলাটে চেহারার এক যুবক, উদ্ভ্রান্তের মতো দৃষ্টি যার চোখে। ছুটছে সে টকটকে লাল সূর্য নিয়ে। খাঁচায় বন্দী সেই সূর্যকে হাতে নিয়ে প্রাণপণে পালিয়ে বেড়াচ্ছে সে। আর চিহ্ন রেখে যাচ্ছে নগরের দেয়ালে দেয়ালে। কে সে?
দেয়ালচিত্র থেকে বোঝা যায়, পালিয়ে বেড়ানো পাগলাটে সেই যুবকের নাম সুবোধ। ঢাকার বিভিন্ন দেয়াল জানান দিচ্ছে, সুবোধের ভাগ্যে কিছুই নেই, সময়ও বিপক্ষে তার। কে বা কারা যেন তাকে তাড়া করে ফিরছে।
দেয়াল চিত্রগুলো জানান দিচ্ছে, মানুষ এখন ভালোবাসতে ভুলে গেছে। সুবোধ এখন কারাবন্দী। পাপবোধ নিশ্চিন্তে বাস করছে মানুষের হৃদয়ে। ‘সুবোধ তুই পালিয়ে যা, তোর ভাগ্যে কিছুই নেই’। ‘সুবোধ তুই পালিয়ে যা, সময় এখন পক্ষে না’।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, কিছুদিন থেকে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় গুরুত্বপূর্ণ সড়কের পাশে দেয়ালে দেয়ালে এ ধরনের গ্রাফিতিআঁকা হয়েছে। ধাপে ধাপে লেখাগুলো পর্যালোচনা করলে মনে হবে অন্ধকার থেকে আলোর পথে বা আলোর সন্ধানে ‘সুবোধ’ চরিত্রের একজন ছুটছেন। আবার প্রতীকী অর্থে ব্যবহার করা এ সুবোধ কোনো একজন ব্যক্তি নন। এটি সমাজ, রাষ্ট্র কিংবা জনগণকে ইঙ্গিত করে বৃহত্তর অর্থে বোঝানো হয়েছে। বলার চেষ্টা করা হয়েছে, সুবোধ চরিত্রটি খুব কষ্টে আছে। সেখান থেকে মুক্তি পেতে সে প্রহর গুনছে। সময় পক্ষে নেই বলে একবার তাকে পালিয়ে যেতে বলা হয়েছে। পরের আঁকা গ্রাফিতি-তে বলা হয়েছে, ‘সুবোধ কবে হবে ভোর? সুবোধ চরিত্রের বিক্ষুব্ধ ব্যক্তির হাতে আছে আছে খাঁচাবন্দি সূর্য। তার পাশে আছে একটি শিশু। যাকে সে বলছে- কবে হবে ভোর?। সবশেষে আঁকা গ্রাফিতিতে কোনো মন্তব্য নেই। তবে সেখানে দেখানো হয়েছে, খাঁচাবন্দি সূর্য বেরিয়ে আসার অপেক্ষায়। তার সামনে ভোরের আগমনী হিসেবে মোরগ ডাকার অঙ্গভঙ্গির প্রতীকী চিত্র দেখানো হয়েছে।
এই গ্রাফিতির বিশ্লেষণ করতে গিয়ে গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা কিছুটা নড়েচড়ে বসেছেন। গোয়েন্দাদের ধারণা, এসব গ্রাফিতি আর যাই কিছু হোক এর যারা রূপকার তাদের নিশ্চয় কোনো না কোনো উদ্দেশ্য আছে। সে উদ্দেশ্য জানতে গুরুত্বপূর্ণ গোয়েন্দা সংস্থার চৌকস টিম মাঠে কাজ করছে। তাদের প্রধান লক্ষ্য এর রূপকার খুঁজে বের করা। তারা মনে করছেন, সরকারের বিরুদ্ধে একটি বিশেষ চক্র এমন গ্রাফিতির জন্ম দিয়েছে। তার রহস্য দ্রুত বের করতে না পারলে সচেতন মহলে এক ধরনের ভীতি ও আতঙ্ক বাড়তে পারে।
সূত্র : ডেইলি স্টার। পত্রিকাটির ম্যাগাজিনের একটি রম্যরচনা থেকে তৈরি।