ছবিঃ সংগৃহীত
পঙ্গুত্ব, প্রেম ও প্রণয় মিলিয়ে মোট ১০ বছরের যাত্রার ইতি টেনে অবশেষে গত ডিসেম্বরে বিয়ের পিঁড়িতে বসেছেন অনুপ চন্দন এবং নেহাল ঠাক্কার। দুজনের জীবনই হুইলচেয়ারে আটকে গেলেও সব বাধা অতিক্রম করে তারা এখন স্বাধীন জীবনযাপন করছেন। ১১ মাস আগে তাদের এই ব্যতিক্রমী প্রেমকাহিনি সর্বপ্রথম প্রকাশিত হয় ‘হিউম্যানস অব বোম্বে’ নামের একটি ফেসবুক পেজে। নেহাল পরবর্তী সময়ে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভির কাছে তাদের দির্ঘ সময়ের এই প্রেম কাহিনী তুলে ধরেন।
অনুপ-নেহাল জানান, প্রকৃত ভালোবাসার রাস্তাটা কখনো সহজ না হলেও তাদের রাস্তাটা কিন্তু সহজই ছিল। ঠিক তিন বছরের ব্যবধানে মুম্বাইয়ের ঠিক একই জায়গায়, ঠিক একই গাড়িতে ভিন্ন দুটি দুর্ঘটনায় এ দুজনকেই পঙ্গুত্ব বরণ করতে হয়।
নেহাল বলেন, ‘আমরা দুজনই একই রাস্তায়, একই গাড়িতে ছিলাম এবং দুর্ঘটনায় আমাদের দুজনেরই স্পাইনাল কড ক্ষতিগ্রস্ত হয়। শুধু আমাদের দুজনের দুর্ঘটনার সময়ের ব্যবধান ছিল তিন বছর।’
এনডিটিভিকে নেহাল বলেন, ‘নিনা ফাউন্ডেশন নামে মুম্বাইভিত্তিক একটি এনজিওর এক অনুষ্ঠানে তাদের দুজনের দেখা হয়। আমরা কথা বলি এবং দেখি আমাদের দুজনের জীবনের অনেক অনেক মিল আছে।’ এনজিওটি স্পাইনাল কড ক্ষতিগ্রস্তদের নিয়ে কাজ করে বলে জানান তিনি।
অনুপ এবং নেহাল এসেছেন পৃথক জায়গা থেকে। অনুপ দক্ষিণ ভারতের কেরালার বাসিন্দা আর নেহাল গুজরাটের বাসিন্দা। দুজন দুজনকে পছন্দ করার পর তারা বিয়ের সিদ্ধান্ত নেন। কিন্তু তাদের পরিবারকে রাজি করাতে সাত বছর সময় লেগে যায়। দুজনই পঙ্গু হওয়ায় তারা কীভাবে জীবন সামলাবেন, এ নিয়ে দুই পরিবারই দুশ্চিন্তাগ্রস্ত ছিল। অবশেষে বহু চেষ্টার পর উভয় পরিবারই রাজি হয় এবং ২০১৭ সালের ১২ ডিসেম্বর বিয়ে করেন তারা। এরপরেই তাদের বিয়ের ছবি ফেসবুকে ভাইরাল হয়।
বিয়ের পর প্রথম প্রথম তাদের একটু কষ্ট হতো। কারণ চলাচলের জন্য দুজনেরই অন্য কারো সাহায্যের প্রয়োজন ছিল। তবে ধীরে ধীরে তারা সে সীমাবদ্ধতা কাটিয়ে ওঠেন এবং নিজেরা স্বাধীনভাবে জীবনযাপন করা শুরু করেন।
এ সম্পর্কে নেহাল বলেন, ‘আমরা পরিবার থেকে বাইরে আলাদা থাকতে শুরু করি। সবকিছু নিজেদের মতো সামলানো শুরু করি। জীবন এর চেয়ে আর ভালো হতে পারে না। আমাদের উভয় পরিবারই আমাদের খুব সাহায্য করেছে এবং আমাদের জন্য সুখী।’
নেহাল আরও বলেন, ‘যদি আপনার ভালোবাসা সত্যি হয়ে তাকে, তাহলে যত কষ্টই হোক না কেন, সব সম্ভব। আমাদের গল্প সেটিই প্রমাণ করেছে।’
বাংলা/আরআই/আরএইচ