হুমায়ূন আহমেদ। ছবি : সংগৃহীত
জনপ্রিয় কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদের ৭০ তম জন্মবার্ষিকীতে গাজীপুরের নুহাশ পল্লীতে হাজির হয় তার স্বজন ও ভক্তরা। সোমবার প্রথম প্রহর ১২টা ১ মিনিটে মোমবাতি প্রজ্জ্বলন করে স্মরণ করা হয় এই সৃষ্টিশীল মানুষটিকে।
সকালে কবর জিয়ারত ও আত্মার মাগফিরাত কামনা করে দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়।
এরপর প্রয়াত হুমায়ূন আহমেদের স্ত্রী মেহের আফরোজ শাওন, তার দুই ছেলে নিশাদ ও নিনিতের উপস্থিতিতে
কেক কেটে জন্মদিন পালন করা হয়েছে।
হুমায়ূন আহমেদের স্ত্রী মেহের আফরোজ শাওন বলেন, ‘হুমায়ূন আহমেদ আছে গাজীপুরের নুহাশ পল্লীতে। হুমায়ূন আহমেদের আলোয় গাজীপুর আলোকিত হয়ে আছে। এক অর্থে বাংলাদেশ আলোকিত হয়ে আছে। দূর দুরান্ত থেকে ভক্ত আসেন যারা প্রিয় লেখকের সমাধীতে যাওয়ার রাস্তার কথাটা বলেন। প্রতি বছর বর্ষায় রাস্তা ভেঙ্গে যায় চলাচলের খুব অসুবিধা হয়। স্বপ্নের নুহাশ পল্লী পর্যন্ত আসার রাস্তাটার দিকে নজর দেওয়া প্রয়োজন। হুমায়ূন আহমেদ ভক্তদের দিকে তাকিয়ে অন্তত এটুকু করা উচিত।’
শাওন আরো বলেন, ‘সম্প্রতি একটি বিষয় আমরা জানতে পেরেছি বন বিভাগের কিছু জায়গা নুহাশ পল্লীর ভেতর ঢুকে পড়েছে। হুমায়ূন আহমেদ জীবিত থাকাকালী এরকম কোনো ঘটনা আমরা শুনিনি। হঠাৎ করে এটা আমাদের কাছে বাজ পড়ার মতো মনে হচ্ছে। হুমায়ূন আহমেদ যখন জায়গাটা কিনেছেন তখন হয়তো কাগজপত্রের মধ্যে কোনো ভুল ছিল।’
হুমায়ূন আহমেদ ১৯৪৮ খ্রিস্টাব্দের ১৩ নভেম্বর ময়মনসিংহ জেলার অন্তর্গত নেত্রকোণা মহুকুমার মোহনগঞ্জে তার মাতামহের বাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা শহীদ ফয়জুর রহমান আহমদ এবং মা আয়েশা ফয়েজ।
হুমায়ূন আহমেদ বিংশ শতাব্দীর বাঙালি জনপ্রিয় কথাসাহিত্যিকদের মধ্যে অন্যতম। হিমু, মিসির আলী, শুভ্র’র জন্মদাতা। তাকে বাংলাদেশের স্বাধীনতা পরবর্তী শ্রেষ্ঠ লেখক গণ্য করা হয়। তিনি একাধারে ঔপন্যাসিক, ছোটগল্পকার, নাট্যকার এবং গীতিকার। বলা হয় আধুনিক বাংলা কল্পবিজ্ঞান সাহিত্যের তিনি পথিকৃৎ। নাটক ও চলচ্চিত্র পরিচালক হিসেবেও তিনি সমাদৃত। তার প্রকাশিত গ্রন্থের সংখ্যা দুই শতাধিক। বাংলা কথাসাহিত্যে তিনি সংলাপ প্রধান নতুন শৈলীর জনক। তার বেশ কিছু গ্রন্থ পৃথিবীর নানা ভাষায় অনূদিত হয়েছে, বেশ কিছু গ্রন্থ স্কুল-কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ্যসূচির অন্তর্ভুক্ত।
সত্তর দশকের শেষভাগে থেকে শুরু করে মৃত্যু অবধি তিনি ছিলেন বাংলা গল্প-উপন্যাসের অপ্রতিদ্বন্দ্বী কারিগর। এই কালপর্বে তাঁর গল্প-উপন্যাসের জনপ্রিয়তা ছিল তুলনারহিত। তার সৃষ্ট হিমু ও মিসির আলি চরিত্রগুলো বাংলাদেশের যুবকশ্রেণিকে গভীরভাবে উদ্বেলিত করেছে। তার নির্মিত চলচ্চিত্রসমূহ পেয়েছে অসামান্য দর্শকপ্রিয়তা। তবে তার টেলিভিশন নাটকগুলো ছিল সর্বাধিক জনপ্রিয়। সংখ্যায় বেশি না হলেও তার রচিত গানগুলো সবিশেষ জনপ্রিয়তা লাভ করে।
তার অন্যতম উপন্যাস হলো নন্দিত নরকে, মধ্যাহ্ন, জোছনা ও জননীর গল্প, মাতাল হাওয়া ইত্যাদি। তার নির্মিত কয়েকটি চলচ্চিত্র হলো দুই দুয়ারী, শ্রাবণ মেঘের দিন, ঘেঁটুপুত্র কমলা ইত্যাদি।
তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক হিসেবে দীর্ঘকাল কর্মরত ছিলেন। লেখালিখি এবং চলচ্চিত্র নির্মাণের স্বার্থে তিনি অধ্যাপনা ছেড়ে দেন। ১৯৭১ খ্রিস্টাব্দে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী তাকে আটক করে এবং নির্যাতনের পর হত্যার জন্য গুলি চালায়। তিনি অলৌকিকভাবে বেঁচে যান। প্রথিতযশা গুণী এ লেখক ১৯ জুলাই, ২০১২ সালে মৃত্যুবরন করেন।
বাংলা/এমটি/সিসিএস/এমএইচ