ছবি : সংগৃহীত
জনপ্রিয় গীতিকার, নাট্যকার ও সাংবাদিক অনুরূপ আইচ। তার জন্ম ২৫ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রামে। বাবা টি বি আইচ ও মা নেলী আইচ। লেখালেখি করছেন সাহিত্যের নানান শাখায়। তার লেখা গল্প নিয়মিত প্রকাশিত হচ্ছে দুই বাংলার বিভিন্ন পত্রিকায়।
এবারের একুশে গ্রন্থমেলায় প্রকাশিত হয়েছে তার নতুন গল্পগ্রন্থ ‘প্রেমভাগ্য’ এবং কবিতার বই ‘প্রেম এত সস্তা না’। বই দুটি মেলার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে শুদ্ধপ্রকাশের ৩৯৮ নম্বর স্টলে পাওয়া যাবে। সেই সাথে পাওয়া যাবে পুরাতন দুটি জনপ্রিয় উপন্যাস ‘প্রেমলীলা’ ও ‘প্রেমহীনা’।
অনুরূপ আইচ শুধু গীতিকার গণ্ডিতে আবদ্ধ নয়, তিনি কাজ করছেন বিনোদনের প্রায় সব শাখায়। নাটকের পাণ্ডুলিপি বা চলচ্চিত্রের চিত্রনাট্যও লিখেছেন। তিনি দেড় যুগেরও বেশি সময় ধরে গান লিখছেন। এ যাবৎ প্রায় সহস্রাধিক গান লিখেছেন। তার জনপ্রিয় গানেরে মধ্যে রয়েছে অযুত লক্ষ নিযুত কোটি (ব্যান্ডশিল্পী হাসান), সকাল বেলার কোকিল (বেবি নাজনীন), দিল (আইয়ুব বাচ্চু), পাংখা (মমতাজ), এক জীবন (শহীদ-শুভমিতা), তোমারি পরশ (আরফিন রুমি-পড়শি), দূরে দূরে (ইমরান-পূজা), তুমি আমার (জনি খন্দকার-মোহনা), এক জীবন-২ (শহীদ-শুভমিতা), মন দিয়ে দেখ (ইলিয়াস-নদী), তুমি আমার জীবনে সবকিছু (আরফিন রুমী-পূজা ), বলো না কোথায় তুমি (রুমি-খেয়া), নাচ পাগলা (খান্দকার বাপ্পি), ব্রাজিল নাকি আর্জেন্টিনা (প্রতীক হাসান), মেঘ বলেছে (আসিফ আকবর–কর্নিয়া), নিউ টুনি (প্রমিত কুমার) ইত্যাদি। এ পর্যন্ত তিনি লিখেছেন সহস্রাধিক গান।
গীতিকার হিসেবে পেয়েছেন ‘ইউরো সিজেএফবি অ্যাওয়ার্ড ২০১৪’, কাজী নজরুল ইসলাম পদক, ডিসিআরইউ অ্যাওয়ার্ড, মিজাব অ্যাওয়ার্ডসহ অনেক পুরস্কার। জনপ্রিয় নাটকের মধ্যে উল্লেখ্যযোগ্য সহেনা যাতনা (পরিচালক সকাল আহমেদ), তুফান এক্সপ্রেস (পরিচালক নোমান রবিন), ক্রাইম রিপোর্টার (মুহাম্মদ মোস্তফা কামাল রাজ), প্রেম নয় ভালোবাসা (শাহজাদা মামুন), পাংখা (নোমান রবিন), রাইটার (সুস্ময় সুমন), কথা (এহসান এলাহী বাপ্পী), অনু কিংবা পরমাণু (নোমান রবিন), কেউ এসেছিলো (রিপন মিয়া), ইউ টার্ন (সকাল আহমেদ), রিটার্ন ব্যাক (এহসান এলাহী বাপ্পী) ইত্যাদি। সম্প্রতি অমর একুশে গ্রন্থমেলা ও তার লেখালেখি নিয়ে কথা বলেন তিনি বাংলা ডট রির্পোটের সাথে।
সাহিত্যে এলেন কেন এবং কিভাবে?
অনুরূপ আইচ: ছোটবেলায় বাবাকে কবিতা লিখতে দেখতাম। তিনিই আমাকে ছড়া ও কবিতার প্রেমে ফেলেছিলেন। সে থেকে গানের প্রতিও আগ্রহ তৈরি হয় আমার। ক্লাস টুতে পড়ার সময় বাবা-মায়ের সাথে কলকাতা বেড়াতে গেলে বাবা আমাকে ছোটদের অনেকগুলো বই কিনে দেন। তার মাঝে ‘ছোটদের রবীন্দ্রনাথ’ বইটি পড়ে আমি প্রথম রবীন্দ্রনাথের প্রেমে পড়ি। তখন থেকেই আমি উনার মতো কবি হওয়ার বাসনায় কবিতা বা ছড়া লেখার চেষ্টা করতাম। শুধু তাই নয়, শিশুমনে ভাবতাম, আমার জীবনাচারটা উনার মতো হোক। সেই থেকে শুরু বলা যায়। স্কুল, কলেজে পড়ার সময় থেকে পত্রিকায় নিয়মিত আমার লেখা ছাপা হতো। সেসুবাদে একটা পরিচিতি আসতে থাকে আমার নামের। সেই সুনাম থেকে সাংবাদিকতায় আমাকে নিয়ে আসেন অন্যরা। এখনো এ পেশায় থাকলেও নিজেকে লেখক হিসবে পরিচয় দিতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করি।
মেলায় এবার কী বই আসছে?
অনুরূপ আইচ: এবারের মেলায় আমার নতুন দুটি বই আসছে। একটি গল্পের বই, যার নাম- প্রেমভাগ্য। অন্যটি কবিতার বই, যার নাম- প্রেম এত সস্তা না। বই দুটি মেলায় ৩৯৮ নম্বর স্টল তথা ‘শুদ্ধপ্রকাশ’ এ পাওয়া যাবে। সেই সাথে এই স্টলে আমার পুরাতন দুটি জনপ্রিয় উপন্যাস ‘প্রেমলীলা’ ও ‘প্রেমহীনা’ পাওয়া যাবে নতুন আঙ্গিকে। শুদ্ধপ্রকাশ থেকে বের হওয়া আমার এই চারটি বইয়ের প্রচ্ছদ করেছেন ধ্রুব এষ।
নতুন বই সম্পর্কে বলুন
অনুরূপ আইচ: আমার লেখা পুরাতন উপন্যাস দুটো সম্পর্কে পাঠকের আইডিয়া রয়েছে। ‘প্রেমভগ্য’ বইয়ে প্রেম ভালোবাসা কেন্দ্রিক বেশ কিছু গল্প রয়েছে। যা পড়লে ভালো লাগবে বলে বিশ্বাস আমার। আর কবিতার বই ‘প্রেম এত সস্তা না’ তে আমার লেখা কবিতাগুলো সব বয়সের পাঠকের কাছে ভালো লাগবে। এই বইয়ে সব কবিতা প্রেমভিত্তিক নয়। অন্য মজার মজার সাবজেক্ট নিয়েও কবিতা রয়েছে এতে। কেউ ইচ্ছে করলে এই কবিতাগুলোর মধ্য থেকে বেছে নিয়ে গানও তৈরি করতে পারবে।
গ্রন্থবদ্ধ লেখাগুলোর বিষয়বস্তু নিয়ে যদি বলেন…
অনুরূপ আইচ: আমার বইগুলোর নাম শুনেই যে কেউ বুঝতে পারবে যে, আমার লেখা পাঠকেরা কেন পড়েন। আমিও আমার লেখার প্রতি তাদের চাহিদাকে সম্মান দিই। তাই আমি আমার লেখার বিষয় হিসেবে প্রেমকে বেশি প্রাধান্য দেই। এতে সমসাময়িক বাস্তবতা থেকে শুরু করে নিগুড় কাল্পনিক প্রেমও উঠে আসে। আমার কাছে মনে হয়, আমার লেখায় পাঠকেরা এটাই চায়। এজন্যে বললাম, আমার ‘প্রেমহীনা’ উপন্যাসটা তথাকথিত প্রেমের উপন্যাসের মতো নয়। এটি জনপ্রিয়তা পেলেও আমার বয়েসী অনেক পাঠকও আমাকে বলেছেন, আপনার ‘প্রেমলীলা’ উপন্যাস পড়ে বেশি আনন্দ পেয়েছি। তখনই আমি বুঝেছি, পাঠক আসলে কল্পকাহিনীর চেয়ে বাস্তব থেকে নেয়া গল্পকে বেশি পছন্দ করে। আমার প্রেমলীলা উপন্যাসটি ছিল রগরগে প্রেমের গল্প। সমকালীন কিছু ঘটনা উঠে এসেছিল এতে। তাই আমার কাছে মনে হয়, অন্তত আমার পাঠকেরা প্রেম নিয়ে পড়তে ভালোবাসেন।
বছরের অন্য সময় প্রকাশ না করে মেলায় কেন?
অনুরূপ আইচ: আমি চাই, বছরের অন্য সময়গুলোতে বিশেষ করে, ঈদ, পহেলা বৈশাখ বা ইংরেজি নববর্ষে আমার বই বের করতে। কিন্তু প্রকাশক পাই না আমি। বেশিরভাগ প্রকাশকেরা কেন জানি শুধু বইমেলাকেন্দ্রিক বই বের করতে চায়। এটা আসলে তাদের ব্যাবসায়িক চিন্তা বলে মনে হয়। কেউ সাহিত্যকে ভালোবাসলে তো শুধু বইমেলা কেন্দ্রিক বই প্রকাশ না করে সারা বছর জনপ্রিয়দের পাশপাশি নতুন লেখকদের বই বের করতেন।
সামগ্রিকভাবে মেলা সম্পর্কে আপনার ভাবনা জানতে চাই
অনুরূপ আইচ: বইমেলা আমার কাছে ভালো লাগে। আফসোস লাগে যে টাকার অভাবে অনেক সময় অনেক বই কিনতে পারি না। আমার কাছে মনে হয় যে, বইমেলা উপলক্ষে সাংস্কৃতিক সেতুবন্ধন তৈরি হয় প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে। অন্তত ডিজিটাল যুগেও যে বই বিক্রি হয় বইমেলাতে, তাতে আমি মুগ্ধ।
মেলা নিয়ে কোনো উল্লেখযোগ্য অভিজ্ঞতা
অনুরূপ আইচ: বইমেলা নিয়ে আমার তেমন কোনো তিক্ত অভিজ্ঞতা নেই। শুধু এটুকু বলবো, এর আগে যেসব প্রকাশনী থেকে আমার বই বের হয়েছে তারা প্রত্যেকেই আমাকে কথা দিয়েছিল, মেলার প্রথমদিন থেকে আমার বই পাওয়া যাবে এবং মেলা শেষে আমাকে রয়েলিটি বুঝিয়ে দেবে সঠিক হিসেবে। কিন্তু তারা প্রত্যেকেই কথার বরখেলাপ করেছে আমার সাথে কোনো না কোনোভাবে। তবে এবার শুদ্ধপ্রকাশ আমাকে অ্যাডভান্স রয়েলিটি দিয়ে আমার বই কিনে বের করেছে এবং কথা রেখেছে বলে আমি আনন্দে বিস্মিতও বটে।
লেখালেখি চর্চার ক্ষেত্রে প্রেরণা বা প্রভাব কার কাছ থেকে বা কিভাবে?
অনুরূপ আইচ: শুরুতেই বলেছি, আমার লেখালিখির উৎসাহ আসে বাবার লেখালিখি দেখে। এরপরে আমার জীবনের সকল প্রেরণা যেন রবি ঠাকুরের বইগুলো।
আমাদের দেশে বইমেলার প্রয়োজনীয়তা কী? আপনার দৃষ্টিভঙ্গী থেকে বলুন…
অনুরূপ আইচ: এ প্রসঙ্গেও বলেছি উপরে। তবুও বলি, এই বইমেলা হচ্ছে বলেই হয়ত এই ডিজিটাল যুগেও মানুষ বই কিনছে। পড়ুক বা না পড়ুক, বইয়ের প্রতি আগ্রহটা প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে ছড়িয়ে দিচ্ছে বইমেলা।
প্রকাশকদের নিয়ে আপনার অভিমত কি?
অনুরূপ আইচ: আগেই বলে ফেলেছি নিখুঁতভাবে। আবার বলে কারো আতে ঘা লাগাতে চাই না পুনশ্চ।
লেখালেখি নিয়ে আপনার ভবিষ্যত পরিকল্পনা কি?
অনুরূপ আইচ: আমি বিশ্বাস করি, আমার লেখক জীবনের সকল প্রাপ্তি এসেছে শুধু মাত্র আল্লাহর স্পেশাল রহমতে। তিনি চেয়েছেন বলেই হয়ত আমি গন্ড গ্রাম থেকে একজন অনুজ্জ্বল ছাত্র হয়েও দেশের লেখালিখিতে একটা স্থান করতে পেরেছি। পশ্চিমবঙ্গেও আমার লেখা গল্প কবিতা নিয়মিত ছাপা হচ্ছে অনেক বছর ধরে। কাজেই আল্লাহ চাইলে আমি একদিন আন্তর্জাতিক পর্যায়েও লেখক হিসেবে খ্যাতি পাবো। যে কারণে, আমার মনের মত আরো বেশি বেশি লিখে যেতে চাই। অন্তত আমার পাঠকভক্তদের জন্যে হলেও আমি আরো বেশি বেশি লিখে যেতে চাই।
বাংলা/এসি