ছবি: সংগৃহীত
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ল্যাবরেটরী স্কুল ও কলেজের কর্তৃপক্ষের অবহেলায় আটকে আছে ২১ জন শিক্ষকের নিয়োগ। প্রতিষ্ঠানটির আবেদনের প্রেক্ষিতে বিভিন্ন বিষয়ে স্কুল শাখায় ২ জন এবং কলেজ শাখায় ১৯ জনকে নিয়োগ দেয়ার জন্য সুপারিশ করে বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষ (এনটিআরসিএ)।
আদালতে মামলা জটিলতার কারণ দেখিয়ে এই নিয়োগ প্রক্রিয়াটি আটকে রাখা হয়েছে। এই মর্মে প্রতিষ্ঠানটির অধ্যক্ষ প্রফেসর মোহাম্মদ ফজলুর হকের স্বাক্ষর করা একটি প্রত্যয়ন পত্র পাঠানো হয় সুপারিশকৃতদের কাছে। তবে কেন মামলাহীন স্কুল শাখায় সেই ২ শিক্ষককে নিয়োগ দেয়া হয়নি তা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।
এ বিষয়ে চবি ল্যাবরেটরী স্কুল ও কলেজের অধ্যক্ষ ফজলুল হক বাংলা’কে জানান, ২১টি নয় আমাদের কাছে এনটিআরসিএ থেকে যে, তালিকা এসেছে সেখানে স্কুল শাখার দু’জন সহ মোট ১৮ জনের সুপারিশ করা হয়েছে। আর ওই পদ গুলো নিয়ে আদালতে মামলা বিচারধীন থাকায় আমরা তাদের প্রত্যয়ন পত্র পাঠিয়ে জানিয়েছিলাম।
ফজলুল হক বলেন, ‘আমি ২০১৫ সালে যোগদানের পর দেখি কলেজ শাখায় প্রায় ৬৫০ ছাত্রের বিপরীতে শিক্ষক মাত্র ৪ জন। এজন্য ছাত্রদের সঠিকভাবে পাঠদান করা সম্ভব হচ্ছিলো না। তাই আমি ম্যানেজিং কমিটির সাথে কথা বলে এই পদ গুলো জন্য সরকারের নতুন নিয়ম অনুসারে এনটিআরসিএ’র কাছে আবেদন করি।’
তিনি আরো জানান, তবে সব জটিলতা কেটে গেছে, গত ৭ তারিখ ম্যানেজিং কমিটির এক সভায় ৩টি সিদ্ধান্ত হয়। সিদ্ধান্ত গুলো হলো ক. এনটিআরসির সুপারিশকৃত শিক্ষকদের নিয়োগদানের জন্য দ্রুত আইন উপদেষ্টার পরামর্শ নেয়া, খ. কলেজ শাখায় নতুন পদ সৃষ্টি করার জন্য আমাকে আহ্বায়ক করে ৪ সদস্যের একটি কমিটি করা হয়েছে, গ. আইনি জটিলতা না থাকায় স্কুল শাখার ২ জন শিক্ষককে নিয়োগ দেয়া।
ফজলুল হক আরো যোগ করেন, এর মধ্যেই স্কুল শিক্ষকদের নিয়োগ দেয়ার জন্য কাজ চলছে। আর আগে কলেজ শাখায় ৩০০ ছাত্রের জন্য মোট ১৮ জন শিক্ষক ছিলো। আর বর্তমানে বিজ্ঞান, মানবিক ও বাণিজ্য এই ৩ বিভাগ মিলে কলেজে ছাত্র সংখ্যা প্রায় ৬৫০ জন। তাই সরকারি নীতিমালা অনুসারে নতুন করে শিক্ষক নিয়োগ দিতে হবে।
তিনি আরো বলেন, ‘এনটিআরসি’র সদ্য সুপারিশ করা এই নতুন ১৬ কলেজ শিক্ষকদের আমরা নিয়োগ দিবো। তবে আইনি জটিলতার কারণে তাদের আপাতত বেতন দেয়া হবে পার্ট-টাইম শিক্ষক হিসেবে। আর পদ শূন্য হলে তাদের সেখানে নিয়োগ দেয়া হবে। কারণ আমাকে তো কলেজ চালাতে হবে, ছাত্রদের ক্ষতি করা যাবে না। এসব প্রক্রিয়া সম্পন্ন হতে আরো ১ হতে ২ মাস সময় লাগতে পারে।’
ভিসি স্যার ( চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যাঞ্জেলর) এই ব্যাপারে খুবই আন্তরিক, কিন্তু তার আশেপাশে আরো অনেকেই আছেন যারা নিজ স্বার্থ হাসিল করার জন্য সমস্যা সৃষ্টি করছেন। কারো নাম উল্লেখ না করেই এই মন্তব্য করেন অধ্যক্ষ ফজলুল হক।
এনটিআরসি থেকে চবি ল্যাবরেটরী কলেজে বাংলা বিভাগে নিয়োগের জন্য সুপারিশকৃত মো. সাইফুল ইসলাম বাংলা’কে জানান, পরিবারসহ সবাই জানে আমার চাকরী হয়েছে। অন্যরা এর মধ্যেই চাকরিতে যোগদান করেছেন কিন্ত আমি ঘরে বসে আছি। ফলে পরিবার ও আশপাশের অনেকর মুখেই নানান রকমের কথা শুনতে হচ্ছে আমাকে।
এরকম ভুক্তভোগি এনটিআরসি’র পরীক্ষার মেধা তালিকায় ৩৯৩ হওয়া হাকিমুল তুষার বাংলা’কে জানান, এর ফলে আমি সামাজিক ও পারিবারিকভাবে লাঞ্চনার শিকার হচ্ছি। এক প্রকার পারিবারের লোকদের থেকে পালিয়ে থাকার মত অবস্থা।
হাকিমুল আরো বলেন, ‘আপনারা খেয়াল করে দেখবেন ওখানে যারা এ পর্যন্ত নিয়োগ পেয়েছেন। তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো শিক্ষকের স্ত্রী, মেয়ে, পুত্রবধূ বা তাদের আত্মীয়-স্বজন। আমি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র তাই আমি এসব জানি। তাই তারা আমাদের নিয়োগটা নিয়ে সমস্যা তৈরী করছেন বলে আমি মনে করি।’