ছবি : সংগৃহীত
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে মহাপরিকল্পনার নামে সেচ্ছাচারিতা ও লুটপাট বন্ধ করার আহবান জানিয়েছেন বাংলা বিভাগের অধ্যাপক শামীমা সুলতানা। মঙ্গলবার রাত ৮টায় ‘দুর্নীতির বিরুদ্ধে জাহাঙ্গীরনগর’ ব্যানারে আয়োজিত মশাল মিছিল শেষে আয়োজিত সমাবেশে তিনি এই মন্তব্য করেন।
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা আগুন জ্বালাতে চাই না আমরা আগুন নেভাতে চাই ,সুপরিকল্পিত পরিকল্পনার মাধ্যমে উন্নয়ন কাজ পরিচালনা করুন। যেখানে সেখানে গাছে হাত দিবেন না, প্রকৃতিকে বিনষ্ট করবেন না। সময় থাকতে আলোর পথে আসুন। যেনতেন ভাবে লুটপাট করবেন না। আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ে কোন দুর্নীতি চলতে দিবো না। যেখানেই অন্যায় হবে সেখানেই প্রতিবাদ হবে। এখনি সচেতন না হলে এই মশালের আগুন সারা বাংলাদেশে ছড়িয়ে পড়বে। ’
মঙ্গলবার অনুষ্ঠিত এই মশাল মিছিলটি বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার থেকে শুরু হয়ে মেয়েদের হল ও ভিসির বাসভবন প্রদক্ষিণ করে ট্রান্সপোর্টে এসে শেষ হয়। পরে সেখানে এক সংক্ষিপ্ত সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
সমাবেশে বক্তরা ছাত্র বিতর্কিত শৃঙ্খলাবিধি বাতিল, মাস্টারপ্লান পূর্ণবিন্যাস, ছাত্রলীগকে ২ কোটি টাকা দেয়ার বিচার বিভাগীয় তদন্তের দাবি, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হলকে ঘিরে তিন হলের স্থান পরিবর্তন, সাংবাদিক লাঞ্ছনার প্রতিবাদ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণ প্রকৃতি রক্ষার দাবি জানায়।
দর্শন বিভাগের অধ্যাপক আনোয়ার উল্লাহ ভূঁইয়া বলেন, ‘জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় কখনো অন্যায় অবিচারকে মেনে নেয় না। উপাচার্যকে বলতে চাই জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় কোন অপরাধ দুর্নীতিকে কখনো গ্রহণ করে নাই এবং ভবিষ্যতেও করবে না। আমরা এতদিন সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে কথা বলেছি সন্ত্রাস নির্মূল করেছি। নিপীড়নের বিরুদ্ধে কথা বলেছি নিপীড়ন নির্মূল হবে। কিন্তু আপনি যদি মনে করেন যাদের ২কোটি টাকা দিয়েছেন তাদেরকে দিয়ে আপনি রক্ষা পাবেন। তাহলে সেটা ভুল হবে।’
ছাত্র ইউনিয়ন জাবি সংসদের কার্যকরী সদস্য রাকিবুল হক রনি বলেন, ‘আজকের প্রতিবাদ একদিনের না। আমরা আমাদের দাবি দীর্ঘদিন ধরে বলে আসছি। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন দাবিসমূহ কর্ণপাত করছে না। পাবলিক পার্টিসিপেশন ছাড়া করা মাস্টারপ্ল্যান সংশোধন করতে হবে। আমরা জাতীয় দৈনিকে দেখলাম প্রকল্পের ২ কোটি টাকা উপাচার্য ছাত্রলীগকে ভাগ করে দিচ্ছেন। এই টাকা দেশের জনগণের টাকা। এই টাকা ছাত্রলীগকে ভাগ করে দেওয়ার অধিকার উপাচার্যের নাই। উপাচার্য ইউসিজিকে বলেছেন আমরা উন্নয়ন বিরোধী। কিন্তু আমরা উন্নয়ন বিরোধী না। আমরা চাই পরিকল্পিতভাবে উন্নয়ন হউক। সকল ধরনের অস্বচ্ছতা ও দুর্নীতি বন্ধ করতে হবে।’
সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ দিদার বলেন, ‘আমরা গাছ কাটা বিরুদ্ধে আন্দোলন করছি না। আমরা আন্দোলন করছি অপরিকল্পিত মাষ্টারপ্যান বাস্তবায়নের বিরুদ্ধে।আমরা আন্দোলন করছি রাষ্টের জনগণের টাকা লুটপাটের বিরুদ্ধে। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় কখনই রাষ্ট্রের জনগণের কষ্টের টাকা লুটপাট করতে দিবে না।’
সমাবেশে জাহাঙ্গীরনগর সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি আশিকুর রহমান বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীরা কখনো অন্যায় ,দুর্নীতি, অপরিকল্পনাকে সহ্য করেনি।জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় কখন স্বেচ্ছাচারিতা সহ্য করেনি।আমাদের আন্দোলন যৌক্তিক। প্রশাসন যদি আন্দোলনকে অযৌক্তিক মনে করে তাহলে আমাদের যুক্তি খন্ডন করুন। যদি যুক্তি খন্ডন করতে পারেন তাহলে আমরা আন্দোলনের মাঠ ছেড়ে দেবো। আর যদি যুক্তি খন্ডন করতে না পারেন এবং আমাদের আন্দোলন যৌক্তিক হয় তাহলে প্রশাসনকে হুশিয়ারি দিচ্ছি আমাদের দাবি মেনে নিন নতুবা আপনাদের ভবিষ্যতে ভয়ংকর কিছু অপেক্ষা করছে।’
এ সময় অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন- বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী প্রগতিশীল শিক্ষক সমাজের সভাপতি আবদুল জাব্বার হাওলাদার, সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক খবির উদ্দীন, পরিবেশ বিজ্ঞানের অধ্যাপক জামালুদ্দিন রুনু, দর্শন বিভাগের অধ্যাপক রায়হান রাইন, বাংলা বিভাগের অধ্যাপক নাজমুল হাসান তালুকদার, অধ্যাপক তারেক রেজা, ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক খন্দকার হাসান মাহমুদ, চারুকলা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক শামীম রেজা, ছাত্র অধিকার পরিষদের আহ্বায়ক শাকিলউজ্জামান, ছাত্র ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক আরিফুল ইসলাম অনিক, সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের সভাপতি মাহাথির মুহাম্মদ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
বাংলা/এএএ