ছবি : সংগৃহীত
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে দুর্নীতি ও সাংবাদিক লাঞ্ছনার ঘটনায় গড়ে ওঠা আন্দোলনে অংশ নেয়ায় শিক্ষার্থীকে মারধরের অভিযোগ উঠেছে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের বহিষ্কৃত এক কর্মীর বিরুদ্ধে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের ৪৮তম ব্যাচের শিক্ষার্থী ও আল বেরুনী হলের আবাসিক ছাত্র সোহায়েব ইবনে মাসুদ জানান, মঙ্গলবার সন্ধ্যায় শিক্ষার্থীদের মশাল মিছিল শেষ হলে ফিরে গেলে তিনি নির্যাতনের শিকার হন।
তিনি বলেন, ছাত্রলীগকর্মী ও বিশ্ববিদ্যালয়ের পাবলিক হেলথ এন্ড ইনফরমেটিক্স বিভাগের ৪৭তম ব্যাচের শিক্ষার্থী সাইফুর রহমান সরকার তাকে মারধর করেন।
সাইফুর রহমান বিশ্ববিদ্যালয়ের আল বেরুনী হলের বহিষ্কৃত শিক্ষার্থী ও শাখা ছাত্রলীগ সভাপতি জুয়েল রানার অনুসারী বলে জানা যায়।
সোহায়েব ইবনে মাসুদ এ বিষয়ে প্রক্টর বরাবর বৃহস্পতিবার লিখিত অভিযোগে জানান, মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ‘দুর্নীতির বিরুদ্ধে জাহাঙ্গীরনগর’ এর ব্যানারে মিছিলে তিনি অংশগ্রহণ করেন। মিছিল শেষে রাতে হলে ফেরেন। পরে রাত ১২টার দিকে অভিযুক্ত সাইফুর রহমান তাকে মিছিলে যোগ দিয়েছিল কিনা জানতে চান। পরে মশাল মিছিলে যাওয়ার কারণ জানতে চান সাইফুর।
উত্তরে মাসুদ তাকে বলেন ‘দাবিগুলো যৌক্তিক তাই আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেছি।’
মাসুদ আরো বলেন, আমি তিনটা দাবির কথা বলি এর মধ্যে একটা দাবি হলো প্রকল্পের টাকা দুর্নীতির বিচার করা। এসময় সাইফ বলেন যে, দুর্নীতি হইলে দুর্নীতির তদন্ত হবে। তুই কেন মিছিলে গেছিস? আমি উত্তর করতেই তার সামনে থাকা পানিভর্তি বোতল আমার দিকে ছুঁড়ে মারেন। বোতলটি এসে আমার বুকে লাগে। এরপর সে আমার দিকে এগিয়ে এসে আমার বুকের আঘাত করে এবং আমার কলার টেনে ধরে শার্টের বোতাম ছিঁড়ে ফেলেন।
এর আগেও গত ২৫ ফেব্রুয়ারি পাবলিক হেলথ অ্যান্ড ইনফরমেটিক্স বিভাগের প্রথম বর্ষের (৪৮ তম ব্যাচের) শিক্ষার্থীদের র্যাগ দেয়ার সময় অভিযুক্ত সাইফুর রহমানকে হাতেনাতে ধরেন প্রক্টরিয়াল বডির সদস্যরা। পরবর্তীতে ঘটনার পরের দিন অভিযুক্ত শিক্ষার্থীদের বহিষ্কারের সুপারিশ করে সিন্ডিকেট বরাবর প্রতিবেদন জমা দেয় প্রক্টরিয়াল বডি। সুপারিশের প্রেক্ষিতে সাইফুর রহমানসহ ৪৭তম ব্যাচের ৭ জন শিক্ষার্থীকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়।
শনিবার বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের অনিয়ম ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে গড়ে ওঠা আন্দোলন 'বন্ধ করতে', ছাত্রলীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে আলোচনায় বসেন বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কর্মকর্তারা। এ সময় প্রয়োজনে আন্দোলন বন্ধ করতে শিক্ষার্থীদের 'মারধর' করার নির্দেশ দেয়া হয় বলে ঘনিষ্ট সূত্রে জানা যায়।
এদিকে এ 'বিশেষ নির্দেশের' পর আন্দোলনকারী সাধারণ শিক্ষার্থীদেরকে হুমকি ও নির্যাতনের ঘটনা ঘটছে বলে জানান জাহাঙ্গীরনগর সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি আশিকুর রহমান।
তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন যুক্তিতে হেরে গিয়ে পেশি শক্তির ব্যবহার করছেন। আমরা জানতে পেরেছি ছাত্রলীগের সঙ্গে মিটিং করার পর থেকে বিভিন্ন হলে নির্যাতন ও লাঞ্ছনার ঘটনা ঘটছে। আমরা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে হুঁশিয়ারি দিয়ে বলতে চাই হুমকি ধমকি দিয়ে কোন যৌক্তিক আন্দোলন দমাতে পারবেন না।
তবে বিশেষ নির্দেশনার কথা অস্বীকার করে প্রভোস্ট কমিটির সভাপতি অধ্যাপক বশির আহমেদ বলেন, ‘আমরা হলের সিট সমস্যা নিরসনের লক্ষে আলোচনা করার জন্য ছাত্রলীগের সঙ্গে বসেছিলাম। অন্যকোন কারণে নয় কিংবা তাদেরকে কোন বিশেষ নির্দেশনা দেয়া হয়নি।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর আ স ম ফিরোজ উল হাসান বলেন, আমি জেনেছি, যেহেতু এটা হলের আভ্যন্তরীণ বিষয় আমি হল প্রভোস্টকে জানাতে বলেছি। হল প্রভোস্ট আমাদের সহযোগিতা চাইলে আমরা সহযোগিতা করব।
বাংলা/এএএ