• ২৯ আগস্ট ২০১৯ ২৩:২২:৩২
  • ৩০ আগস্ট ২০১৯ ২০:০৯:৫৩
অন্যকে জানাতে পারেন: Facebook Twitter Google+ LinkedIn Save to Facebook প্রিন্ট করুন
বিজ্ঞাপন

ত্রুটিপূূর্ণ মাস্টারপ্লান ঘিরে উত্তাল জাবি, তীব্র হচ্ছে আন্দোলন

ছবি : বাংলা

শাহাদাত হোসাইন স্বাধীন, জাবি প্রতিনিধি :

বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বলছেন উন্নয়ণের মাস্টারপ্লান, অন্যদিকে শিক্ষার্থীরা বলছেন পরিবেশ বিধ্বংসী, দুর্নীতি এবং ত্রুটিপূর্ণ অস্বচ্ছ মাস্টারপ্লান। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের মহাউন্নয়ন পরিকল্পনা (মাস্টারপ্লান) ঘিরে এখন এ দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে পরেছে বিশ্ববিদালয় প্রশাসন ও মাস্টারপ্লান বিরোধী শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। এই প্রকল্প সাময়িক স্থগিত করে এর পূনর্বিন্যাসের দাবী জানিয়ে আন্দোলন চলছে। এই আন্দোলন ঘিরে অচিরেই বিক্ষোভে উত্তাল হয়ে উঠতে যাচ্ছে জাবি প্রাঙ্গন। পিছিয়ে যেতে পারে ভর্তি পরীক্ষাও।

বর্তমান মাস্টারপ্লান বিরোধী শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা বলছেন পরিবেশের ক্ষতিসহ নানা রকম সমস্যার বীজ রয়েছে এই ‘ত্রুটিপূর্ণ উন্নয়ন পরিকল্পায়’। খোদ উপাচার্যের বিরুদ্ধে উঠেছে অনৈতিক অর্থ লেন-দেনের অভিযোগ। ইতোমধ্যে এই পরিকল্পনার আওতায় বেশ কিছু গাছ কাটা হলে চরম ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে শিক্ষার্থীদের মাঝে। বিক্ষুদ্ধ শিক্ষার্থীরা প্রতিবাদে একাধিক কর্মসূচি পালন করেছে। ডাক দিয়েছে আরো বৃহৎ আন্দোলনের। অচিরেই ঘেরাওসহ আরো বড় ধরনের কর্মসূচি আসতে যাচ্ছে।

জাবির উন্নয়ন প্রকল্পের পরিকল্পনাই ‘অপরিকল্পিত’ :

গতবছর ২৩ অক্টোবর একনেকে অনুমোদন পায় জাবির অধিকতর উন্নয়ন প্রকল্প। একহাজার ৪৪৫ কোটি টাকার এই প্রকল্প ঘিরে শুরু থেকেই রয়েছে বিতর্ক। এই উন্নয়ন প্রকল্পের মাস্টারপ্লানকে অপরিকল্পত বলে অভিযোগ তোলেন শিক্ষার্থীরা ও শিক্ষকদের একাংশ। মাস্টারপ্লানের কাজের প্রথম দফায় গত ৩০ জুন ছেলেদের তিনটি ও মেয়েদের দুইটি হলের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন উপাচার্য অধ্যাপক ফারজানা ইসলাম।

উদ্বোধনের পর অপরিকল্পিতভাবে হল নির্মাণের প্রতিবাদে ৮ জুলাই থেকে আন্দোলনে নামে শিক্ষক-শিক্ষার্থী ঐক্যমঞ্চ। আন্দোলনের প্রেক্ষিতে উন্নয়ন প্রকল্পের মহাপরিকল্পনা জনসম্মুখে আনার আশ্বাস দেন উপাচার্য। এর প্রেক্ষিতে ১৭ জুলাই বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট হলে উন্মুক্ত আলোচনা সভা ডাকেন উপাচার্য ফারজানা ইসলাম। এতে মহাপরিকল্পনার একটি এ্যনিমেশন ভিডিও পদর্শন করলে তার নানা ত্রুটি-বিচ্যুতি তুলে ধরে আপত্তি জানান শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। এ নিয়ে সেই সভায় তুমুল বিতর্কের ভেতর অসমাপ্ত থেকে যায়।

পরিকল্পনাটি পূনর্বিন্যাস ও কাজ স্থগিতের দাবিতে আন্দোলন:

‘মাস্টারপ্লান’ পূনর্বিন্যাস না হওয়া পর্যন্ত উন্নয়ন কাজ বন্ধ রাখারও অনুরোধ করেন শিক্ষকরা। সেই সাথে ভবন নির্মাণের নামে এখনই যেন কোন গাছ কাটা না হয় সে বিষয়েও দাবি তোলেন শিক্ষক শিক্ষার্থীরা। শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের অনুরোধকে উপেক্ষা করে বিশ্ববিদ্যালয়ের টারজান পয়েন্টের পাশে মেয়েদের হলের জন্য নির্ধারিত স্থানে গাছ কাটা শুরু হয়। এর প্রেক্ষিতে পহেলা আগস্ট উপাচার্যের সঙ্গে দেখা করতে যায় শিক্ষক-শিক্ষার্থী ঐক্যমঞ্চ। শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা পরিকল্পনা পর্যালোচনা না করে কাজ শুরু না করার অনুরোধ জানান। সেসময় বন্ধের মধ্যে গাছ না কাটার আশ্বাস দেন উপাচার্য। পরে ৩ আগস্ট একই স্থানে ফের গাছ কাটে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। এর প্রতিবাদ জানায় শিক্ষার্থীরা।

ক্যাম্পাসের বিভিন্ন সংগঠন প্রতিবাদ জানিয়ে বিবৃতি দেয়। অন্যদিকে শিক্ষার্থীরা মিছিল মানববন্ধনের মতো কর্মসূচি পালন করে। ছোট ছোট প্রতিবাদের মধ্যদিয়ে দানা বাঁধতে শুরু করে আন্দোলন।

মাস্টারপ্লান নিয়ে বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠনেও ত্রুটি : 

ছাত্র শিক্ষকদের আন্দোলনের মুখে ২১ জুলাই বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকতর উন্নয়ন প্রকল্প কার্যক্রম নিয়ে একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি করে প্রশাসন। ১৪ সদস্যের এই কমিটির প্রধান করা হয় নগর অঞ্চল ও পরিকল্পনা বিভাগের অধ্যাপক আবুল কালাম আজাদকে। কিন্তু এ পর্যন্ত এই কমিটি বৈঠক করেছে মাত্র একটি! ওই একটি বৈঠক ছাড়া আর কোন দৃশ্যমান কাজ হয়নি।

বিশেষজ্ঞ কমিটির সভাপতি অধ্যাপক আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘আমি কমিটির প্রধান হয়েছি। যদিওবা আমি দায়িত্ব নিতে চাইনি। আমরা মূলত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কি কি করছে তার ধারণা নিব। রবীন্দ্রনাথ হলের মাঠটা যাতে বাঁচানো যায় সেদিকেও ভাবছি। এখানে প্রকল্পগুলো আলাদা আলাদা পাশ হয়েছে। পরে তা সমন্বয় করা হয়েছে। মাস্টারপ্লানের সমস্ত কম্পোনেন্ট (উপাদান) এখানে অনুপস্থিত। তবে বার্ড ওয়ে, লেকরক্ষা এসব বিষয় মাথায় রাখা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়কে টাকা প্রকল্প প্রস্তাবের ভিত্তিতে দেওয়া হয়েছে। ফলে এসব প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে হবে। মাস্টারপ্লান করার আগে সবার জানা থাকলে হয়ত এখন যে প্রশ্নসমূহ উঠছে তা উঠত না।’

অন্যদিকে পরিবেশ বিজ্ঞানের অধ্যাপক জামাল উদ্দীন বলেন, ‘মহাপরিকল্পনা প্রণয়নের লক্ষ্যে বিস্তারিত টিওআর (টিম অফ রেফারেন্স) থাকতে হয় যা সিন্ডিকেট কর্তৃক মনোনীত বিশেষজ্ঞদের দ্বারা প্রণীত হওয়া উচিত। প্রস্তুতকৃত টিওআর (টিম অফ রেফারেন্স)- টি সিন্ডিকেট ও সিনেট কর্তৃক পাশ হতে হবে। মহাপরিকল্পনা প্রণয়নের জন্য প্রকল্প পরিচালক ও প্রকল্প ব্যবস্থাপক মনোনয়ন দিতে হয় যার মধ্যে একজন অবশ্যই এ কাজে অভিজ্ঞ পরিকল্পনাবিদ হওয়া উচিত যা এই প্রকল্পে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি।’

মহাপরিকল্পনার কাজটি বুঝে নেয়া ও মূল্যায়ন করার জন্য একটি উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন টিএমইসি (টেকনিক্যাল মনিটরিং এন্ড এভ্যুলেশন কমিটি) থাকা একান্ত প্রয়োজন যাতে একজন পরিকল্পনাবিদসহ পরিবেশ বিশেষজ্ঞ, উদ্ভিদ ও প্রাণী বিশেষজ্ঞ, ভূগোলবিদ, সমাজতত্ত্ববিদ, তথ্য ও প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ, পানি বিশেষজ্ঞ, পরিবহন বিশেষজ্ঞ, অর্থনৈতিক বিশেষজ্ঞ ও ভৌত অবকাঠামো প্রকৌশল বিশেষজ্ঞ উপস্থিত থাকবেন। বাস্তবে এ ধরনের কোনো কমিটি গঠন করা হয়নি।

ভূ-উপরিভাগ ও ভূগর্ভস্থ পানির তথ্য, উদ্ভিদ ও প্রাণীর আবাসস্থল, তাদের প্রজনন ও পরিভ্রমণের তথ্য, বর্তমান ভূমি ব্যবহার ও নির্মিত স্থাপনার তথ্য, পরিবেশের উপাদানগুলোর (পানি, বায়ু, মাটি, শব্দ ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনা) তথ্য এবং বর্তমান ইউটিলিটি সার্ভিস সংক্রান্ত (বিদ্যুৎ, পানি, গ্যাস, ইন্টারনেট, ডিস ও পয়ঃনিষ্কাশন সঞ্চালন লাইন) তথ্য উক্ত মহাপরিকল্পনায় অনুপস্থিত, যেসব একটি পূর্ণাঙ্গ, কার্যকর ও টেকসই মহাপরিকল্পনার পূর্বশর্ত।

নগর ও পরিকল্পনা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. আদিল মুহম্মদ খান এই মাস্টারপ্লানকে ত্রুটিপূর্ণ পরিকল্পনা বলে মন্তব্য করেন।

টেন্ডারে বাধা, অনৈতিক লেনদনের অভিযোগ এবং ছাত্রলীগের ‘সিকিউরিটি বিল’ :

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে এখন দুটি বিষয় টক অব দ্য ক্যাম্পাস। যার একটি হলো ‘মাস্টারপ্লান’ অন্যটি হলো ‘দুইকোটি’ টাকা। প্রকল্পের কাজ নির্বিঘ্নে এগিয়ে যেতে এবং কোন বাধা প্রদান না করার শর্তে ছাত্রলীগকে ভিসি দুইকোটি টাকা দিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। অনেকে একে ‘সিকিউরিটি বিল’ হিসেবেও মন্তব্য করছেন। এই টাকা কিভাবে ভাগ বটোরয়া করা হয়েছে ছাত্রলীগ নেতাদের এমন ফোন রেকর্ডও গণমাধ্যম কর্মীদের কাছে রয়েছে। কে কত টাকা পেয়েছেন কোন হলে কোন নেতার কাছে কত টাকা গিয়েছে সেই সব তথ্য তুলে ধরে সংবাদ প্রকাশ হওয়ায় তা দেশব্যাপী আলোচনার জন্ম দেয়।

অন্যদিকে ছাত্রলীগ কর্মীরা গত ২৩ মে একটি ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের দরপত্র ছিনিয়ে নিয়েছেন বলে অভিযোগ দিয়েছিলো প্রতিষ্ঠানটি। উপাচার্য বরাবর সেই অভিযোগ দেয়া হলেও কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি বলে জানা যায়।

উপাচার্যের কাছে তথ্য জানতে চেয়ে সাংবাদিক লাঞ্চিত :

ছাত্রলীগকে দুই কোটি টাকা প্রদানের অভিযোগের বিষয়ে উপাচার্য অধ্যাপক ফারজানা ইসলামের বক্তব্য আনতে গেলে লাঞ্ছনার শিকার হয় জাতীয় দৈনিকের দুই সাংবাদিক। উপাচার্য অফিসের কর্মকর্তারা তাদের ছবি তুলে রাখেন বলেও অভিযোগ ওঠে। 

লাঞ্চিত সাংবাদিকরা অভিযোগ করেন, ‘ছাত্র লীগকে দুই কোটি টাকা প্রদানের অভিযোগ সম্পর্কে বক্তব্য জানতে চাইলে উপাচার্য তাদের ওপর রেগে গিয়ে বলেন, তারা এমন প্রশ্ন করার সাহস কোথায় পেলেন?’ 
একপর্যায়ে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রক্টরকে ওই সাংবাদিকদের  বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শৃঙ্খলা বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে বলেন। উপাচার্যের এহেন অপেশাদারি আচরনে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ সারাদেশে নিন্দার ঝড় উঠে।

এসব অভিযোগ এবং সাম্প্র্রতিক সময়ে জাবির পরিস্থিতি নিয়ে বাংলা’ পক্ষ থেকে উপাচার্যের সাথে দুই দিন চেষ্টা করেও কোন যোগাযোগ করা যায়নি। ফলে তার কোন বক্তব্য সংগ্রহ করা যায়নি।

এসব বিষয় নিয়ে আলাপকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক গীতি আরা নাসরিন বাংলা'কে বলেন, ‘ যারা সংবাদমাধ্যমের বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি তাদের জন্যও মুক্তপ্রকাশের আন্তর্জাতিক চার্টার ও প্রেস কাউন্সিলের আচরণবিধি প্রযোজ্য। সুতরাং বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এমন কোন আচরণবিধি আলাদা করে নির্দিষ্ট করতে পারেন না, যা উপরোক্ত চার্টার ও আচরণবিধির সঙ্গে সাংঘর্ষিক। সাংবাদিকতার মূলনীতি ও নৈতিকতা মেনে চলে, সংবাদ প্রকাশের ক্ষেত্রে ক্যাম্পাসের একজন সাংবাদিক যেন কোন চাপ ছাড়া সংবাদ-সংগ্রহ ও প্রকাশ করতে পারেন সেটি নিশ্চিত করার দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট সকলের।’

উপাচার্যের সাংবাদিক এড়িয়ে চলার প্রেক্ষিতে অভিযোগের উত্তর কার কাছে জানবে সাংবাদিকরা। এই প্রশ্নের উত্তরে  তিনি বলেন, ‘সংবাদ সংগ্রহের জন্য একজন সাংবাদিক এ বিষয়ে যথাযথ তথ্য রাখেন এমন কারো কাছে বা কোনো মুখপাত্রের কাছেই যাবেন। সময়াভাবে কোন মুখপাত্র তথ্য দিতে না পারলে, সেক্ষেত্রে তিনি তথ্যদানের জন্য তার কোনো প্রতিনিধি নির্বাচন করবেন। যে সমস্ত বিষয় জনস্বার্থ সংশ্লিষ্ট এবং যে তথ্য জনগণ জানার অধিকার রাখে, তা প্রকাশ করার ক্ষেত্রে তো কোনো আপত্তি থাকার কথা নয়। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় জনগণের অর্থেই পরিচালিত হয়, সুতরাং এর আয়-ব্যয় সংক্রান্ত তথ্য তো স্বচ্ছ ও উন্মুক্ত থাকাই স্বাভাবিক। শুধু সাংবাদিক নন একজন শিক্ষার্থীর ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য । তথ্য অধিকার আইন (২০০৯) অনুযায়ী একজন সাধারণ নাগরিকেরও তথ্য চাইবার অধিকার আছে। ক্যাম্পাস সাংবাদিকরা তাদের তথ্য সংগ্রহ ও প্রকাশের আন্তর্জাতিক ও দেশীয় বিধিমালার আলোকেই তথ্য পাবার দাবী জোরালো রাখতে হবে।’

ক্রমেই তীব্র হয়ে উঠছে আন্দোলনের ঢেউ :

একদিকে পরিবেশ রক্ষা, ত্রুটি পূর্ণ মাস্টারপ্লানের বিরোধীতা জারী রাখা ও দুর্নীতির প্রতিবাদে আন্দোলনে উত্তাল হয়ে উঠেছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়। এতোদিন থেমে থেমে চলা আন্দোলন এবার তীব্র আকার ধারন করছে। গঠন করা হয়েছে অভিন্ন প্লাটফরম ‘দুর্নীতির বিরুদ্ধে জাহাঙ্গীরনগর।’

গত ২৩ আগষ্টের পর থেকে বিক্ষোভ, সমাবেশ, মশাল মিছিলসহ বিভিন্ন ব্যাতিক্রমী সব প্রতিবাদ কর্মসূচি পালিত হচ্ছে একের পর এক। কাটাগাছ নিয়ে কফিন মিছিল করেছেন শিক্ষার্থীরা। ‘স্বৈরাচার্যের মাস্টার প্ল্যান চ্যাট‘ নামে ব্যাঙ্গাত্মক সাংস্কৃতিক প্রতিবাদী আয়োজন অনুষ্ঠিত। এসব প্রতিবাদে সংহতি জানিয়ে অংশ নিচ্ছে শিক্ষকরাও। ১ সেপ্টেম্বরের ভেতর আন্দোলনকারীদের ঘোষিত ৩ দফা দাবী মানা না হলে ৩ সেপ্টেম্বর প্রশাসনিক ভবন অবরোধ-ঘেরাও করাে হবে। এরপর নতুন কর্মসূচি ঘোষনা করা হবে।

এদিকে আন্দোলনের কারণে পিছিয়ে যেতে পারে জাবি’তে ভর্তি পরিক্ষার সময়ও। আন্দোলনের তীব্রতার উপর নির্ভর করছে পরিক্ষা পেছাবে না যথা সময়ে হবে। বিভিন্ন সূত্রে আলাপ করে এমন আভাস পাওয়া গেছে।
অন্যদিকে আন্দোলনকারীদের একাধিক সূত্রে জানিয়েছে আন্দোলনকে আরো তীব্র করার প্রস্তুতি নিয়েছেন তারা। সার্বিক পরিস্থিতি মাথায় রেখেই আন্দোলনের কর্মকৌশল নির্ধারন করবেন তারা। প্রশাসনের গতিবিধির উপরও নজর রাখছেন। আন্দোলন বানচাল করতে কোন ধরনের চক্রান্ত করা হচ্ছে কিনা সে বিষয়েও সর্তকতার সাথে নজর রাখছেন।

যা বলছেন আন্দোলনকারীরা:

শিক্ষক-শিক্ষার্থী ঐক্যমঞ্চের মুখপাত্র রায়হান রাইন বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হল ঘিরে নির্মিতব্য হলগুলোর স্থান পুননির্ধারণ করে এমন জায়গা নিতে পারত যাতে বেশী সংখ্যক গাছ কাটা না পড়ে। এতে সংকট অনেকটা কমতো। তারা সেটা করেনি। উপরন্তু প্রকল্পের টাকা লুটপাটের খবর পরিস্থিতিকে জটিল করেছে।

আন্দোলনের সংগঠক ও জাহাঙ্গীরনগর সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি আশিকুর রহমান বাংলা'কে বলেন বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীরা কোন অন্যায়, দূর্নীতি ও অপরিকল্পনাকে কখন সহ্য করেনি। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় কখন স্বেচ্ছাচারিতাকে সহ্য করেনি। আমাদের আন্দোলন যৌক্তিক। প্রশাসনের যদি আন্দোলনকে যৌক্তিক মনে না হয় তাহলে আমাদের যুক্তি খন্ডন করতে পারে। যদি যুক্তি খন্ডন করতে পারেন তাহলে আমরা আন্দোলনের মাঠ ছেড়ে দিবো। আর যদি যুক্তি খন্ডন করতে না পারেন আর আমাদের আন্দোলন যৌক্তিক হয় তাহলে প্রশাসন কে হুঁশিয়ারি দিচ্ছি আমাদের দাবি মেনে নিন। নাহলে আপনাদের জন্য ভবিষ্যতে ভয়ঙ্কর বিষয় অপেক্ষা করছে।’

সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ দিদার বলেন, ‘আমরা গাছ কাটার বিরুদ্ধে আন্দোলন করছি না। আমরা আন্দোলন করছি অপরিকল্পিত মাস্টারপ্লান বাস্তবায়নের বিরুদ্ধে। আমরা আন্দোলন করছি রাষ্ট্রের জনগনের টাকা লুটপাটের বিরুদ্ধে। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় কখনই রাষ্ট্রের ও জনগণের কষ্টের টাকা লুটপাট করতে দিবে না।’

বাংলা/এএএ

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
Page rendered in: 0.1497 seconds.