ছবি : সংগৃহীত
ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য আসামের চূড়ান্ত নাগরিক তালিকা (এনআরসি) প্রকাশিত হয়েছে। বিতর্কিত এ তালিকায় ঠাঁই মেলেনি ১৯ লাখ মানুষের। যারা ভারতের নাগরিকত্ব হারিয়ে কার্যত রাষ্ট্রহীন হয়ে পড়েছেন। শনিবার (৩১ আগস্ট) স্থানীয় সময় সকাল ১০টার দিকে রাজ্যটির এনআরসি প্রকাশ করা হয় বলে জানিয়েছে এনডিটিভি।
তবে আসামের রাজ্য সরকার জানিয়েছে, কারও নাম বাদ পড়লেই যে সে বিদেশি এমনটি নয়। এদিকে অঞ্চলটির পরবর্তী পরিস্থিতি মোকাবেলায় ২ হাজার ৫০০টি সেন্টার খোলা হয়েছে। এর আগে দুটি খসড়া তালিকায় বাদ পড়েছিল প্রায় ৪১ লাখ মানুষ।
প্রতিবেশী বাংলাদেশ থেকে আসা কথিত ‘অবৈধ’ অভিবাসীদের শনাক্ত এবং তাদের বের করে দেয়ার লক্ষ্যে ভারতের বিজেপি সরকার এই তালিকা তৈরির উদ্যোগ নেয়। তবে বাংলাদেশ সরকার দাবি করে আসছে, আসামে তাদের কোনো নাগরিক নেই।
২০১৭ সালের ডিসেম্বরে তিন কোটি ২০ লাখ মানুষের দলিলপত্র যাচাই করে প্রথম খসড়া তালিকা প্রকাশ করা হয়। যাচাই-বাছাইয়ের পর ওই খসড়ার দ্বিতীয় তালিকাটি প্রকাশিত হয় ২০১৮ সালের ৩০ জুলাই।
এনআরসিতে যাদের নাম রয়েছে তারা প্রমাণ করতে পেরেছেন যে তারা ১৯৭১ সালের ২৪ মার্চের আগে আসামে এসে হাজির হয়েছেন। নাগরিকত্ব প্রমাণের জন্য রাজ্যের সব অধিবাসীকে তাদের জমির দলিল, ভোটার আইডি এবং পাসপোর্টসহ নানা ধরনের প্রমাণপত্র দাখিল করতে হয়েছিল।
১৯৭১ সালের পর যাদের জন্ম, প্রয়োজনীয় কাগজপত্র দাখিলের মাধ্যমে তাদের প্রমাণ করতে হয়েছে যে তাদের বাবা-মা কিংবা তাদের বাবা-মা ওই তারিখের আগে থেকেই রাজ্যটির বাসিন্দা।
তবে চূড়ান্ত এনআরসি তালিকা প্রকাশের পরও এতে অন্তর্ভুক্ত হওয়ার সুযোগ এখনই বন্ধ হচ্ছে না বলে জানিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার। তারা জানিয়েছে, যারা চূড়ান্ত তালিকা থেকে বাদ পড়বে তারা ট্রাইব্যুনালের মাধ্যমে নাগরিকত্ব যাচাই করার পুনরায় সুযোগ পাবে। তালিকা প্রকাশের পর আপিল করার জন্য সময় ৬০ দিন থেকে ১২০ দিন করা হয়েছে।
আপিল জানাতে কাজ করছে ১০০টি ফরেইনার্স ট্রাইব্যুনাল (এফটিএস), অতিরিক্ত আরও ২০০টি এফটিএস গঠন করা হচ্ছে বলেও জানা গেছে। ট্রাইব্যুনালের মাধ্যমে আবেদনের পরেও যদি কেউ নাগরিকত্ব হারায় উচ্চ আদালতে গিয়ে পুনরায় আবেদন করার সুযোগ থাকছে।
এদিকে এক প্রতিবেদনে ইন্ডিয়া টুডে জানায়, নাগরিকদের চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশকে কেন্দ্র করে অঞ্চলটির নিরাপত্তা জোরদার করেছে কর্তৃপক্ষ। কোথাও কোথাও জারি আছে ১৪৪ ধারা। মোতায়েন করা হয়েছে ১০ হাজারেরও বেশি আধা-সামরিক বাহিনী ও পুলিশ।
আনন্দবাজার জানিয়েছে, তালিকা প্রকাশের পর বিশৃঙ্খলার সৃষ্টির আশঙ্কায় গোটা রাজ্যকে নিরাপত্তার বলয়ে মুড়ে ফেলা হয়েছে। মোতায়েন করা হয়েছে ৬০ হাজার পুলিশ। আরও ২ হাজার আধা সামারিকবাহিনীর সদস্য পাঠানো হয়েছে।
আসাম পুলিশ টুইটে জানিয়েছে, যে সব ব্যক্তিদের নাম চূড়ান্ত তালিকায় থাকবে না, তাদের পর্যাপ্ত নিরাপত্তা দেওয়ার ব্যবস্থা করেছে সরকার। পাশাপাশি তারা এই আহ্বানও জানিয়েছে, ‘গুজবে কান দেবেন না। এই পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে সমাজে একটা বিভ্রান্তি ছাড়ানোর চেষ্টা করছে কিছু অসামাজিক শক্তি। নাগরিকদের নিরাপত্তা দেওয়াই আমাদের মূল লক্ষ্য।’
বাংলা/এসএ