ছবি: সংগৃহীত
ভাগ
*
চিন্তার সাথে চিন্তা
ভাগ হয়ে যায়
জীবনের সাথে জীবনের তফাতে!
*
চিন্তার সাথে চিন্তা
ভাগ হয়ে যায়
দৃশ্যের সাথে দৃশ্যের তফাতে!
*
চিন্তার সাথে চিন্তা
ভাগ হয়ে যায়
কর্মের সাথে কর্মের তফাতে!
*
মানুষের সাথে মানুষ
ভাগ হয়ে যায়
চিন্তার সাথে চিন্তার তফাতে!
আঁধারের রাতে জ্বলে মানুষের চিতা
আঁধারের রাতে জ্বলে
মানুষের চিতা,
পোড়া মানুষের ঘ্রাণে
ক্ষয় হয় হাড়।
জেগে থেকে রাত ভোর হয়
ডাহুক করুণ সুরে ডাকে-
ক্রমাগত বারংবার।
ডাকে না শুধু তোমার সুর,
ক্ষয়ে যাওয়া এ বুকে
চিতার আগুন জ্বলে!
মরুভূমির তপ্ত রোইদে
অবচেতনে ছায়ারা খেলে;
আঁধারের এ রাতে-
হৃদয়ে আগুন জ্বালিয়েছে
মানুষের চিতা।
দূরে-বহুদূরে বা কাছেই
কোথাও না কোথাও পুড়ছে
কোনো না কোনো জীবন-
মানুষের মন,
জীবন য্যানো-
থেমে থেমে ক্ষয়ে ফেলা
কিছু অনুক্ষণ!
দৃশ্যের পর দৃশ্য সাজালে
মুহূর্তের পর মুহূর্তের-
গাঁথুনিতে তৈরি হয়-
একটার পর একটা গল্প!
সিকোয়েন্সের পর সিকোয়েন্স জুড়ে
বুনন চলে
আনন্দ কিংবা বেদনার রিলের।
এই হাওয়ার রাতে
ব্যথার দারুণ বিষে
মুচড়ে উঠে আমার মন।
কোন সে ব্যথায় ক্ষয়ে যায়
মাছেদের হৃদয় নির্জনে?
কোন শোকে ঝরে পড়ে
আয়ুহীন খোসা!
জীবন্ত এইসব জীবনের পাতা!
কোথাও পুড়ছে পাখিদের মন
ছড়ানো দাবানলের মতোন।
বন পোড়ানোর দুঃখে
প্রকৃতির কান্না ঝরে
পাখির হৃদয়ের কোঠরে।
কোথাও মানুষ বেঁচে নেই-
যারা বেঁচে আছে,
তারা মূলত মানুষের ছায়া!
কী জানি! কোথাও হয়তো আছে বেঁচে- কেউ কেউ
তারা মূলত লড়াকু! তারা মূলত যোদ্ধা কিংবা চোয়ালবদ্ধ সংগ্রামী।
লড়াই করছে জীবনের সাথে,
অস্ত্রের সাথে,
শত্রুর সাথে, দানবের সাথে-
একটা মানুষের জীবনের জন্য!
এই বেঁচে থাকার যুদ্ধে,
দখল হয়ে যাওয়া,
ছিনিয়ে নেওয়া-
অধিকার আদায়ের লড়াইয়ে যুক্তরা-ই
মূলত মানুষ হওয়ার পথে আছে।
বাকিরা বন্দী হয়ে গেছে
তাদের অন্তর্গত চাহিদার কাছে,
লোভের কাছে, নিশ্চয়তার কাছে
ভ্রান্ত স্বপ্নের কাছে, মেশিনের কাছে
তাদের প্রভুদের বানানো স্বপ্নের কিংবা প্রভুদের সিস্টেমের কাছে।
কবিতায় কী হয়?
কবির জীবন তো মূলত ক্ষয়!
মানুষের জীবনও তাই নয় কি?
কবি বা মানুষ যদি না লড়ে শব্দে কিংবা সাক্ষাতে
তাহলে তো তার জীবন মরণ সম!
তুমি ভাবছো, তুমি তৈরি করছো নতুন জগৎ,
কচু করছ হে কবি!
তুমি বসত কর যে অন্তর্গত প্রজ্ঞায়
তাও তোমার একান্ত আপনার নয়।
দুঃস্বপ্নের মতোন চমকে উঠে দেখবে একদিন
তুমি গড়েছ যে জগত, তাও অন্য কারও।
চুরি হয়ে গেছে তোমার চিন্তা, তোমার কলম
তুমিও অনন্ত পুনরাবৃত্তিতে গেয়ে যাচ্ছ
তাদেরই শিখিয়ে দেওয়া পুনরাবৃত্তির গান-
তাই হারিয়ে যাওয়ার আগে,
মরে মরে বেঁচে থাকার আগে-
বরং শত্রুর দিকে তাক করো
তোমার কলম!
শব্দের বুলেট বোমা ফাটাও
কাঁপন ধরাও তাদের হৃদয়ে।
তাদের দুঃস্বপ্ন তাদেরকেই ফেরত দাও
তাদের পোড়া জগত তাদের দিকেই ফিরে মারো
তোমার শব্দের জীবনের জোরে!
সবচেয়ে প্রাণঘাতী যে শব্দ বোম তাই ছুঁড়ে মারো
অন্তত আতঙ্কে কেঁপে উঠুক!
যারা লড়াই করছে তারা সাহস পাক!
মানুষের ঘুম ভাঙ্গুক,
অনেক ঘুমিয়েছে মানুষ
তার এখন জাগার সময়!
কত ঘুমাবে হে মানুষ!
আর কত জ্বলবে
আঁধারের রাতে মানুষের চিতা?
দূরত্ব
অথচ কথা ছিল, তোমার-আমার মাঝে তৈরি হওয়া দূরত্বের চেয়েও কয়েক হাজার ক্রোশ রাস্তা একসাথে পারি দিব!
৩, কমলাপুর বাজার রোডের গলি
প্রেম, কাম, ক্যাওয়াজ
আর সাথে আছে
জীবনের আওয়াজ!
সতত এক আঁধারও আছে
য্যানো মিশে গ্যাছে
জীবনের আদি প্রেরণায়।
জীবন পুরাণ
এইসব দিন-রাতে
একা একা বসে ভাবি
ক্ষয়ে যায় জীবন ভীষণ!
কেন ক্ষয়ে যায় অনাদরে-
আদরে আদরে ভেবেছিলে কি?
জীবন এভাবে কেটে যাবে
ভালোবাসায় চির অম্লান!
অনাদরে থাকে যে জীবন
তার কাছে জীবন কেমন?
যে বোধে ভেসে বেড়াও
জীবন কি তার মতোন?
তুমি ভেসে যাও আনন্দে
হয়তো ক্ষয়ে যাও ব্যর্থতায়।
তবুও কেন বয়ে বেড়াও?-
এইসব লেনাদেনা-
বেচাকেনা বাঁচামরা।
কেন?
কেন?
কেন?
জীবন এমন-
ভীষণ বেয়াড়া!
অনিশ্চয়তায় কেন খুঁজে?-
এতো নিশ্চয়তা-এতো আশা!
বেঁচে থাকে অকারণ
আশা-নিরাশায় মন উচাটন!
কেন তবে এতো ভাবো রে মন!
ক্ষয়ে যেতে যেতে
আধমরা হয়ে থাকে যে জীবন
কেন তাকে বয়ে বেড়াও অকারণ?
মানুষকে কেন জানো
তার ব্যথার কাছে!
যাও, চলে যাও দূরে-
পারো যত দূরে!
ঘৃণায় কুঁচকে উঠুক মন
কাঁটা দিক শরীরের প্রতিটি কোষে কোষে
আশার গান নেই কোথাও
ঘৃণার গান গাও তাই।
ভুলে যাও ভালোলাগা
ভালবাসার স্মৃতি সব!
এক জীবন ঘৃণা নিয়ে পার করে দাও,
জীবন জীবনরে করে ক্ষয়।
এইসব বোধে অন্ধ করে দাও আমারে
হে জীবন!
কেন জেগে আছি?
কেন ভালোবাসি?
তবুও কেন জানি-
ভালোবাসা না থেকেও থাকে
শূন্যতার মতোন!
বুদবুদ হয়ে হাওয়ায় উড়ে যায়
তবুও ঠিক শূন্য নয়।
শূন্য মানে কি?- নেই!
কিছুই নেই?
তবুও কেন শূন্যতাই খুঁজে মানুষ!
ভালোবেসে ব্যথা খুঁজে অকারণে
মরণ ডেকে আনে নিজের আড়ালে
ভালোবেসে ক্ষয়ে যায় ভালবাসায়।
ক্ষয়-ক্ষয়, এ জীবন শুধুই ক্ষয়?
আসলেই কি তাই?
জানে না এ হৃদয়!
জানে শুধু ক্ষয়ে যাওয়া সময়
যে আগুন জ্বেলে বেঁচে থাকো
তুমি হে জীবন!
তার চিতা কোথায় জ্বলে!
জানো কি কিছু!
তুমি জানো না কিছুই
স্বপ্ন খেয়ে দেয় স্বপ্নকে!
ভালোবাসা খোয়া যায় ভালোবাসায়!
এক অন্তর্গত ঘৃণার জমিন চাষ করে যাও-
আজীবন!
আহ! দুঃসহ বেদনায়-
মূষড়ে পরে জীবন!
তুমি তার নাম দিয়েছ জীবন!
এই এক জীবন নিয়ে
কত বড়াই কর হে মানুষ?
অহঙ্কার খেয়ে বেঁচে থাকো তুমি
অহঙ্কারে অহঙ্কারে লীন হতে থাকো
ক্ষয়ে ফেলো নিজেরে!
যদিও জানো এ সবই ফাঁকিবাজি!
পালিয়ে বেড়ানো!
পালিয়ে পালিয়েও গজায়নি কোনো পাখা
আর কত পালাবে, হে জীবন?
আসো, আবার ফিরে আসো
কিচিরমিচির করো
কিছু শব্দ তৈরি করো
কোলাহলে নতুন কিছু শব্দ যুক্ত করো
আঘাতে আঘাতে চূর্ণ কর আমারে!
ভেঙ্গে ফেল যত অহঙ্কার!
পুড়ে খাক হয়ে যাক অহঙ্কারের হেডকোয়ার্টার!
তবুও জেনো
জীবন থামে না কখনো
বয়ে যায় নিরবধি
তার অন্তর্গত গতিতে!
যে বেদনার জাল বুনেছি আজীবন
তাতে গেঁথেছি সকল বোধ
বোধে বোধে হয়েছি অবোধ
তারে খেয়ে ফেলুক নতুন বাতাস
নতুন হাওয়ার ঝড় উঠুক প্রাণে
এসো এসো পান করে যাও আমারে
হে জীবন!
পান করো সকল গরল।
গরলে গরলে জীবন করো অমৃত
হে জীবন!
আঘাতে আঘাতে আমারে ভাঙ্গো
হে জীবন!
তবুও আঘাতকেই মেনেছি তো জীবনের সত্য!
কথা বলো না-
শুধু ব্যথা দিয়ে যাও
হে জীবন!
ব্যথার ঝড় তোল
হে জীবন!
ব্যথায় সত্য-ব্যথায় মূর্ত!
আমারে খুঁজো এই ব্যথার মাঝেই।
জেনো রেখো, এই সত্যই জেনো-আজীবন!
ব্যথা নেই তো আমিও নেই!
ব্যথা
ব্যথা
ব্যথা!
কত ব্যথাকে বলা যায় জীবনের পরিপূর্ণতা!
হে জীবন!
বলো, বলে যাও আমারে!
সকল কথা, সকল অনুভূতি, সকল শব্দ
কান্না হয়ে ঝড়ে যায়-ব্যথায়!
তবুও অস্বীকার করবে তাকে?
কোন ব্যথারে অস্বীকার করবে তুমি?
ভালোবাসা-
সেও ব্যথা!
ঘৃণা-
সেও ব্যথা!
আনন্দ-
সেও ব্যথা!
হে জীবন!
তুমি চুপ কেন?
কেন এতো নীরব?
কোলাহল কোথায়?
উচ্ছ্বাস কোথায়?
হৈ-হুল্লোড় কোথায়?
নাকি সেগুলোও অন্তর্গত কোনো ব্যথা!-
হে জীবন!
বলে যাও, বলে যাও হে প্রাণ
কতদিন শুনি না তোমার কথা-
হে জীবন!
বলো, বলো
বলো, কথা বলো হে প্রাণ-
কথা বলো হে জীবন!
জীবনের কথা-ব্যথ্যার কথা!
ভালোবাসার কথা!
বলে যাও ক্ষয়ে যাওয়ার কথা!
আমি শুনি-শুনে শুনে ক্ষয়ে যাই
আমিও তো ক্ষয়ে যাবো
হে জীবন!
কোনো না কোনো দিন!
অপেক্ষা! শুধুই অপেক্ষা!
কিসের অপেক্ষা?
ক্ষয়ে যাওয়ার
ব্যথায় ব্যথায় ক্ষয়ে যাওয়ার অপেক্ষা!
আমাকে বলে দাও
হে জীবন!
এক জীবনে কত জীবনের অভিজ্ঞতা নিয়ে ঢুকলাম
কত অজানা জীবনে!
কত জীবনের নির্যাসে গড়েছি এ জীবন!
তবুও কেন তোমারে বুঝি না
হে জীবন!
তবুও কেন তোমারে পাই না
হে জীবন!
বল, বল, বলে যাও
হে জীবন!