ছবি : সংগৃহীত
ভারত দখলকৃত জম্মু এবং কাশ্মীরে আটক হওয়া শিশু কিশোরদের পরিবারের কাছ থেকে তাদের খাবারের মূল্য আদায় করা হচ্ছে বলে অভিযোগ জানিয়েছেন ভুক্তভোগী পরিবারের সদস্যরা। বুধবার অনলাইনভিত্তিক ভারতীয় সংবাদমাধ্যম দ্য প্রিন্ট এ প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এই তথ্য প্রকাশ করা হয়।
জম্মু এবং কাশ্মীরের গ্রীষ্মকালীন রাজধানী শ্রীনগরে পুলিশের হাতে আটক কয়েকজন কিশোরের পরিবার অভিযোগ করে বলেছে, কর্তৃপক্ষ তাদের নাবালক সন্তানদের কেবল আটকই করছে না বরং পুলিশ হেফাজতে থাকার সময় তাদের খাবারের জন্য যে ব্যয় হচ্ছে তাও পরিবারের কাছ থেকেই আদায় করা হচ্ছে।
শ্রীনগরের স্থানীয় এমন ৫ টি পরিবার জানায়, বেসামরিক পোশাক পরা পুলিশ কর্মকর্তারা ঘর থেকে তাদের নাবালক সন্তানদের উঠিয়ে নিয়েছে। ১৪ থেকে ১৬ বছর বয়সি এসব কিশোরদের প্রাইভেট গাড়িতে করে থানায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে।
পুলিশ হেফাজতে থাকার পর মুক্তি পাওয়া এমন তিনজন কিশোরের সঙ্গে দ্য প্রিন্টের প্রতিবেদকের কথা হয়। তারা প্রত্যেকেই জানায়,সুনির্দিষ্ট কোন অভিযোগ ছাড়াই তাদের এক সপ্তাহের বেশী আটকে রাখা হয়েছিল। সেসময় তাদের নির্মমভাবে প্রহারও করা হয়েছিল।
পুলিশের হাতে আটক একজন কিশোরের বাবা দ্য প্রিন্টকে জানান, পুলিশ তাকে প্রতিদিন ১০০ রুপি (ভারতীয় মুদ্রা) দেয়ার জন্য বলেছিল। এই টাকা দিয়ে তার ছেলের জন্য খাবার কেনা হবে বলেও জানিয়েছিল সে।
উল্লেখ্য, ৫ আগস্ট ভারত সরকার সংবিধানের ৩৭০ ধারা উচ্ছেদ করে জম্মু-কাশ্মীর রাজ্যের স্বায়ত্তশাসন ক্ষমতা কেড়ে নেয়। রাজ্যটিকে তিনটি অঞ্চলে ভাগ করে কেন্দ্রীয় সরকারের অধীনে নিয়ে আসা হয়। কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা কেড়ে নেয়ার ঘটনায় কাশ্মীরিরা যেন প্রতিবাদ করতে না পারে সেজন্য ঐ অঞ্চলে কারফিউ জারি করা হয়। এছাড়া রাজ্যটির সাবেক মুখ্যমন্ত্রীসহ স্থানীয় রাজনীতিবিদদের গৃহবন্দী করে রাখা হয়।
এতকিছু করার পরেও কাশ্মীরিরা যেন ন্যুনতম প্রতিবাদও না করতে পারে তা নিশ্চিত করার জন্য শ্রীনগরের পুলিশ বাড়ি বাড়ি গিয়ে তরুণ যুবকদের পাশাপাশি কম বয়সি শিশু-কিশোরদেরও আটক করে থানায় নিয়ে আসে।
পুলিশ জানায়, আইন-শৃংখলা বজায় রাখতে এভাবে গণহারে আটক করা হচ্ছে। পাশাপাশি পুলিশের দাবি, শিশু-কিশোরকে যেদিন আটক করা হয়েছে সেদিনই ছেড়ে দেয়া হয়েছে। তাদের কেবল জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করা হয়েছিল।
শ্রীনগরের জ্যেষ্ঠ পুলিশ সুপারিনটেনডেন্ট হাসিব মুঘল পুলিশ বাহিনীর বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ উঠেছে তার সবগুলোই অস্বীকার করেন। তবে ১৪ থেকে ২৪ বছর বয়সি কাশ্মীরিদের যে আটক করা হচ্ছে সে বিষয়টি স্বীকার করে নেন। তাদের সামান্য কিছু জিজ্ঞাসাবাদের পরেই ছেড়ে দেয়া হচ্ছে বলে জানান তিনি।
তিনি উল্লেখ করেন, যেসব অঞ্চলে পুলিশকে লক্ষ্য করে পাথর ছুঁড়ে মারা হচ্ছে কেবল সেসব এলাকা থেকেই শিশু-কিশোরদের আটক করা হচ্ছে।
এদিকে জম্মু এবং কাশ্মীরের জুভেনাইল জাস্টিস কমিটি ১ অক্টোবর আদালতে পেশ করা এক প্রতিবেদনে জানায়, ৫ আগস্টের পর থেকে কাশ্মীরে ১৪৪ জন শিশুকে আটক করা হয়েছে। তবে আটক শিশু-কিশোরের সংখ্যা আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ করেনি পুলিশ।
আনুষ্ঠানিক অভিযোগ ছাড়াই এসব শিশু-কিশোরদের দিনের পর দিন আটকে রাখা হচ্ছে বলে জানিয়েছে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল।
বাংলা/এফকে