• ১১ ডিসেম্বর ২০১৯ ০৯:২৫:২৮
  • ১১ ডিসেম্বর ২০১৯ ০৯:২৫:২৮
অন্যকে জানাতে পারেন: Facebook Twitter Google+ LinkedIn Save to Facebook প্রিন্ট করুন
বিজ্ঞাপন

ঢাকা কবে রুয়ান্ডার রাজধানী কিগালির মতো হবে?

কামরুল হাসান মামুন


রুয়ান্ডার নাম আমরা কমবেশি সবাই শুনেছি এবং মাঝে মাঝে এই দেশ নিয়ে আমরা অনেকেই হাসি ঠাট্টাও করি। রুয়ান্ডার রাজধানী কিগালি আজ আফ্রিকার সবচেয়ে পরিচ্ছন্ন রাজধানীতে রূপান্তরিত হয়েছে। কয়েক মিনিটের এই ভিডিও ক্লিপটি দেখলে মনে আহঃ আমার ঢাকা শহরটি যদি এমন হতো?

দুঃখের বিষয় হলো আজ আমাদেরকে আফ্রিকার যেই দেশটি কদিন আগেও গৃহযুদ্ধে লিপ্ত ছিল সেই দেশের মত হওয়ার স্বপ্ন দেখতে হয়। এই লজ্জা কোথায় রাখি? দেশটা সুন্দর হবে কিভাবে? কেউ অর্থ অর্জন কিংবা জ্ঞান অর্জন করা মাত্রই অর্থ ও জ্ঞান দিয়ে দেশকে উন্নত করার কাজে চেষ্টা করার বদলে সব কিছু নিয়ে উন্নত বিশ্বে চলে যায়। ঠিক যখন তাদের রিটার্ন দেওয়ার সময় আসে তখন তারা নাই হয়ে যায়।

নিউটনের সূত্রানুসারে যেকোন স্ট্যাটের পরিবর্তনের জন্য প্রয়োজন নন-জিরো ড্রাইভিং ফোর্স। সেই ফোর্সটা আসবে রাজনৈতিক নেতৃত্বের মাধ্যমে। একজন নেতা লাগবে এবং সাথে লাগবে একটি সুশৃঙ্খল দল ঠিক যেমন ম্যাগনেটিক ফিল্ড আর একদল ডাইপোল মোমেন্ট লাগে অগোছালো ডাইপোল মোমেন্টের পারাম্যাগ্নেটিক ফেইজ থেকে গোছালো সুশৃঙ্খল ফেরোম্যাগ্নেটিক ফেইজে যেতে। নেতার নেতৃত্বই পারে পরিবর্তন আনতে ঠিক যেমন বঙ্গবন্ধু পেরেছিলেন। দেশ এখন স্বাধীন। স্বাধীন দেশের মধ্যে শৃঙ্খলা এনে পরিবর্তন আনার জন্য আমাদের দরকার একজন মানুষ জাগানিয়া আলোকিত, শিক্ষিত, দীক্ষিত, আধুনিক রুচিশীল নেতা। ন্যূনতম কিগালির মত শহর পাওয়াটা খুব কঠিন কোন কাজ না।

এই যে নানা মেগা প্রোজেক্ট নেওয়া হচ্ছে তা কতটা সুদূরপ্রসারী চিন্তার ফসল তা ভেবে দেখার বিষয়। একটি দেশের উন্নয়নকে fragmented বা piecewise হিসাবে দেখলে হবে না। গোটা বিষয়টাকে বড় পর্দায় রেখে তারপর উন্নয়ন পরিকল্পনা করতে হতো। প্রথমে মানুষকে সুশিক্ষিত করতে হতো। যার জন্য প্রথমে প্রয়োজন ছিল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের উন্নয়ন। সেই শিক্ষিত মানুষ দিয়ে পরিবেশ সুন্দর করতে হতো। তারপর মেট্রোরেল, উড়ালসেতু, নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্লান্ট, স্যাটেলাইট ইত্যাদির কথা ভাবা যেত। যেই জাতি তার রাজধানীর ‘ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্ট’ করতে জানে না সেই জাতি কিভাবে ‘নিউক্লিয়ার ওয়েস্ট’ ম্যানেজ করবে?

প্রতিদিন সন্ধ্যায় রেসিডেন্সিয়াল মডেল স্কুলের পাশে বিশাল প্রশস্ত ফুটপাথ দিয়ে হাঁটতে যাই। প্রতিদিনই মনটা খারাপ হয়। পুরো ফুটপাথ ধরে নোংরা ময়লা-আবর্জনা, পলিথিন ইত্যাদি দিয়ে ভরা। ভাবা যায়, একটি স্বনামধন্য স্কুলের পাশে এমন অবস্থা! স্কুল কর্তৃপক্ষের উচিত হয় নিজেরা ছাত্রছাত্রীদের সাহায্যে পরিষ্কার করা না হয় সিটি কর্পোরেশনকে চাপ দেওয়া যেন পরিষ্কার করে।

রুয়ান্ডায় পলিথিন ব্যবহার সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। ভোর পাঁচটার মধ্যে শহরকে একবার পরিষ্কার করা হয় আবার সারাদিন ধরে এই পরিষ্কার পরিচ্ছন্নের কাজটি বজায় রাখা হয়। রুয়ান্ডা মনে করে যে শিক্ষাই উন্নতির সবচেয়ে বড় হাতিয়ার। সেই জন্য তারা ২০১২ থেকে ক্রমাগতভাবে শিক্ষায় বাজেটে বরাদ্দ বাড়িয়েই যাচ্ছে। ২০১২ সালে যেখানে মোট বাজেটের ১৭% ছিল শিক্ষায় ২০১৮ সালে সেটা হয় ২২%! আর আমরা শিক্ষায় বাজেট বরাদ্দ কেবল কমাচ্ছি! শিক্ষা খাতে রুয়ান্ডা তাদের জিডিপির ৩.৫ থেকে ৫.৫% বরাদ্দ দিয়ে থাকে। আর আমরা ২% এর আশেপাশে। এই দুঃখ কোথায় রাখি! বলদামি আর কারে কয়?

লেখক : ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক

[লেখকের ফেসবুক পোস্ট]

বাংলা/এসএ

 

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
Page rendered in: 0.1587 seconds.