ছবি: বিবিসি থেকে নেয়া
টাইম ম্যাগাজিনের ‘বর্ষসেরা’ বা ‘পার্সন অফ দ্য ইয়ার’ ২০১৯ হলেন জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের জন্য এবং বিশ্বব্যাপী এই আন্দোলনকে অনুপ্রাণিত করা ১৬ বছর বয়সের সুইডিশ স্কুলছাত্রী গ্রেটা থানবার্গ। টাইমসের বরাতে খবরটি প্রকাশ করেছে আন্তর্জাতিক বার্তা সংস্থা রয়টার্স।
১৫ বছর বয়সে থানবার্গ প্রতি শুক্রবার স্কুল ফাঁকি দিয়ে সুইডেনের পার্লামেন্টের বাইরে দাঁড়িয়ে সরকারকে কার্বন নিঃসরণ রোধে চাপ প্রয়োগ করতে তৃণমূল আন্দোলন শুরু করেন তিনি। তার এই আন্দোলন খুব ছড়িয়ে পরে এবং গত বছর সেপ্টেম্বর মাসে তার উদ্দেশ্যে সমর্থন করার জন্য লক্ষ লক্ষ মানুষ বিশ্বের বিভিন্ন শহরের রাস্তায় নামে যা একটি বিশাল পরিবেশ আন্দোলনের রূপ নেয়।
টাইমস তার প্রতিবেদনে বলে, ‘থানবার্গ প্রতিবাদ শুরু হওয়ার ১৬ মাসের মধ্যে জাতিসংঘে রাষ্ট্রপ্রধানদের সম্বোধন করে তার মত বিনিময় করেছেন, পোপের সাথে দেখা করেছেন, মার্কিন রাষ্ট্রপতির সাথে সাক্ষাত করেছেন এবং ৪ মিলিয়ন মানুষকে বিশ্বব্যাপী জলবায়ু পরিবর্তন আন্দোলনে যোগ দিতে অনুপ্রাণিত করেছেন।’
উল্লেখ্য, গ্রেটা থানবার্গ টাইমস কর্তৃক প্রশংসিত বিশ্বের সর্বকনিষ্ঠ ব্যক্তি।
মার্গারেট অ্যাটউড তাকে ‘জোয়ান অফ আর্ক’র সাথে তুলনা করেন। ‘জলবায়ু ধর্মঘট’ শব্দটি ব্যবহারে শতগুণ বৃদ্ধি করার লক্ষ্যে, কলিন্স ডিকশনারির অভিধানিকরা থানবার্গের এই অগ্রণী ধারণা, ‘জলবায়ু ধর্মঘট’কে এই বছরের সেরা শব্দ হিসেবে ঘোষণা করেন।
থানবার্গ ২০২০ সালের জানুয়ারিতে ১৭ তে পা দেবেন। বর্তমানে তিনি জাতিসংঘের জলবায়ু সম্মেলনে মাদ্রিদে অবস্থান করছেন। সেখানে পরিবেশের সম্ভাব্য বিপর্যয়, বৈশ্বিক উষ্ণায়নের হাত থেকে বাঁচার জন্য ২০১৫ সালের প্যারিস চুক্তি কীভাবে বাস্তবায়ন করা যায় তা নিয়ে সম্মেলনে উপস্থিত বিশ্ব রাজনীতিবিদদের সাথে বৈঠকে রয়েছেন তিনি। তবে, রাজনীতিবিদদের প্রচেষ্টার মূল্যায়নে কোনো ছাড় দেননি তিনি বলে জানিয়েছে টাইমস।
সম্মেলনের মঞ্চে তার কয়েক ডজন সমর্থক ও দর্শকদের কাছ থেকে প্রশংসা পেয়ে থানবার্গ বলেন ‘দেশগুলোর পক্ষে তাদের দোষ ঢাকা এবং উচ্চাকাঙ্ক্ষা বাড়ানোর সুযোগে পরিণত হয়েছে এই সম্মেলন।’ তিনি আরো বলেন, ‘আমি নিশ্চিত যদি মানুষ শোনে সভায় মধ্যে কী চলছে এবং কী বলা হয়েছে তবে শুধু ক্ষোভই প্রকাশিত হবে।’
প্রাক্তন মার্কিন সহ-রাষ্ট্রপতি, দীর্ঘকালীন পরিবেশবিদ এ এল গোর বলেন, ‘ম্যাগাজিনটি তারকা বেছে নেওয়ার ক্ষেত্রে একটি “উজ্জ্বল নক্ষত্র” পছন্দ করেছে।’ তিনি আরো বলেন, ‘গ্রেটা যুবকর্মী আন্দোলনের নীতিমালা মেনে নিয়েছে যাতে আমরা জলবায়ু সংকট সমাধানে অবিলম্বে কাজ শুরু করতে পারি। গ্রেটা আমার এবং বিশ্বজুড়ে মানুষের জন্য অনুপ্রেরণা।’
থুনবার্গ জানান, তার এস্পেরগার সিন্ড্রোম প্রচারের খাতিরে সাপে বর হয়ে দাঁড়িয়েছে। মাদ্রিদ সম্মেলনে যাওয়ার জন্য বিমান ভ্রমণ এড়াতে ২০ দিনের যাত্রায় আটলান্টিক মহাসাগর পারি দেন তিনি। তারপরই ‘ফ্লাইট-শেমিং’ ইউরোপে বিশেষ ভাবে পরিচিতি লাভ করে। বর্তমানে, বিমানের পরিবেশগত প্রভাব নিয়ে উদ্বিগ্ন কিছু ভ্রমণকারীরা বিকল্পধারার পরিবহন ব্যবহারের সন্ধান করছেন।
প্রসঙ্গত, থানবার্গের এই আপোষহীন অবস্থান তাকে বিশ্বের কয়েকজন শক্তিশালী ব্যক্তির সাথে সংঘর্ষে এনেছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সেপ্টেম্বরে নিউইয়র্কের একটি মার্কিন জলবায়ু সম্মেলনে যোগ দেন যেখানে গ্রেটা ক্ষোভ ভরা চোখে তার দিকে তাকিয়ে ছিলেন। এরই একটি ভিডিও ‘ডেথ স্টেয়ার’ নামে সোশ্যাল মিডিয়ায় বেশ ভাইরাল হয়।
সেই সম্মেলনে ট্রাম্প জলবায়ু বিজ্ঞানকে প্রশ্নবিদ্ধ করেন এবং জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের লক্ষ্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের করা প্রতিটি নিয়মই এক একটি চ্যালেঞ্জ বলে মন্তব্য করেন তিনি।
প্রায় একই সময়ে একটি ভাষণ চলাকালীন সময়ে ক্ষোভে কেঁপে উঠেন গ্রেটা এবং বলেন ‘এসব ভুল। আমার এখানে এই সময় থাকার কথা না আমার থাকার কথা সমুদ্রের অন্য পারে আমার স্কুলে তবুও আপনারা সবাই আশার জন্য আমাদের মত তরুণদের কাছে আসেন। কী দুঃসাহস আপনার!’
গ্রেটা আরো বলেন, ‘আপনি আপনার খালি কথা দিয়ে আমার স্বপ্ন এবং আমার শৈশব দুটোই চুরি করেছেন।’
গ্রেটা ব্রাজিলের রাষ্ট্রপতি জাইর বলসোনারোর আদিবাসীদের বিরুদ্ধে বর্ধমান সহিংসতার সমালোচনা করলে তিনি গ্রেটাকে ‘ব্রাট’ বা ‘বিচ্ছু’ বলে সম্বোধন করেন। আদিবাসীদের বিরুদ্ধে সহিংসতায় অ্যামাজনের দুই উপজাতি গুলিবিদ্ধ হয়েছিলেন।
গ্রেটা এর জবাবে তার টুইটার অ্যাকাউন্টে নিজের জীবনী সংক্রান্ত বিবরণটি পালটে দিয়ে ‘পিরালাহা’ লিখে দেন যা সেই পর্তুগিজ শব্দ যেটা ব্যবহার করে বলসোনারো তাকে অপমান করেছেন।
উল্লেখ্য, ম্যান অফ দ্য ইয়ার হিসাবে শুরু হওয়া এই নাম প্রকাশ টাইম ম্যাগাজিনের একটি ঐতিহ্য। সেই ব্যক্তিকেই এখানে স্বীকৃতি দেয়া হয় যিনি ভাল বা খারাপ দিক দিয়ে বছরের এবং মানুষের জন্য সবচেয়ে বেশি কাজ করে থাকেন।
বাংলা/এসজে