ফাইল ছবি
প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের ধাক্কায় নাকাল সারাবিশ্ব। এই ভাইরাসের মহামারি সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছে উন্নত দেশগুলোও। এমতাবস্থায় বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে সশস্ত্র গোষ্ঠী ও সরকারের মধ্যে চলমান সংঘাতগুলো আরো তীব্র তীব্রতর হবে নাকি প্রশমিত হবে- এই প্রশ্নই এখন সামনে চলে এসেছে।
বিশ্বের সংঘাতময় অঞ্চলগুলো, বিশেষ করে- সিরিয়া, লিবিয়া, ইয়েমেন, আফগানিস্তান এবং আফ্রিকার সাহেল অঞ্চলের সশস্ত্র বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলো করোনা পরিস্থিতির ওপর তীক্ষ্ণ দৃষ্টি রয়েছে। তাই চলমান মহামারিতে এই অঞ্চলগুলো আরো বেশি সংঘাতপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে বলে ধারণা করছেন জাতিসংঘের কূটনীতিকরা। বর্তমানের করোনা সংকট, বৈশ্বিক কূটনীতি ও রাজনীতি নিয়ে এমন একটি বিশ্লেষণ করেছে বার্তা সংস্থা এএফপি।
ফ্রান্সের ইনস্টিটিউট অব পলিটিক্যাল স্টাডিসের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশেষজ্ঞ বার্ট্রান্ড বাডাই বলেন, গেরিলা যোদ্ধা ও চরমপন্থিদের কাছে পরিস্কারভাবে এটি সৃষ্টিকর্তার আশীর্বাদ। ক্ষমতাশালীরা যখন শক্তিহীন হয়ে পড়ে, তখন দুর্বলরাও সবলদের ওপর বদলা নিতে পারে। কারণ তখন তারা তাদের কর্মকাণ্ড আরো বিস্তৃত করার সুযোগ পায়।
তিনি আরো বলেন, সম্প্রতি আফ্রিকার দেশ মালির উত্তরাঞ্চলে এক সন্ত্রাসী হামলায় দেশটির ৩০ সেনা নিহত হয়। এই ঘটনার জন্য উগ্র ইসলামপন্থিদের দায়ী করে দেশটির সরকার। তবে এই হামলা নিয়ে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ শক্ত কোনো প্রতিক্রিয়া দেখায়নি। যদিও আগে এ ধরনের ঘটনায় তারা তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে বিবৃতি দিতো। করোনাভাইরাস বৈশ্বিকভাবে ছড়িয়ে পড়ার আগে লিবিয়া ও সিরিয়ার ইদলিব অঞ্চলে চলমান সংঘাতের ওপর বিশ্ববাসীর দৃষ্টি ছিল। কূটনীতিকদেরও মনোযোগের কেন্দ্রবিন্দু ছিল ওই অঞ্চলগুলো। কিন্তু করোনা মহামারি আকার ধারণ করার পর সংঘাতের বিষয়টি চাপা পড়েছে।
এদিকে ইদলিব ও সিরিয়ায় করোনাভাইরাসের প্রদুর্ভাব ঠেকাতে সব পক্ষকে সংযত হওয়ার আহ্বান জানায় জাতিসংঘের পলিটিক্যাল অ্যাফেয়ার্সের আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেল রোজমেরি ডিকার্লো। এক টুইট বার্তায় তিনি এই আহ্বান জানান।
ইয়েমেনে নিযুক্ত জাতিসংঘের বিশেষ দূত মার্টিন গ্রিফিথসও ঠিক একই আহ্বান জানান। তিনি বলেন, বিশ্ব এখন একটি মহামারির বিরুদ্ধে যুদ্ধ করছে। এমন সময় সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর সংঘাত বন্ধ করা জরুরি। কারণ তাদের এই সংঘাতের কারণে মানুষ আরো কঠিন ঝুঁকির মধ্যে পড়তে পারে। এই ঝুঁকি এড়াতেই তাদের সংযত হওয়া উচিত।
বিশ্লেষকরা জানান, যদিও এখন পর্যন্ত ওই অঞ্চলে করোনাভাইরাস ছড়ায়নি। কিন্তু এই ভাইরাস শক্তিশালী। একটা সময় সেটি দরিদ্র এবং সংঘাতময় দেশগুলোতেও ছড়াবে, আর সেটার প্রভাব হবে বিধ্বংসী। সেখানে সম্মিলিত সহায়তার অভাবে লাখ লাখ মানুষ মারা যেতে পারে বলে আশঙ্কা করছে জাতিসংঘ।
একজন কূটনীতিক জানান, এই মহামারিতে যুদ্ধে লিপ্ত হওয়াটা বিশেষ কোনো গোষ্ঠীর জন্য উপকারী নয়। কারণ প্রাণঘাতী এই ভাইরাসটি নিয়ন্ত্রণের অসাধ্য। এ ভাইরাসের কারণে মানবিক বিপর্যয় বাড়তে পারে। ফলে সংঘাতও বাড়তে পারে।
তবে এর বিপরীতে কিছু বিশেষজ্ঞ বলেন, এই মহামারি উগ্র গোষ্ঠীগুলোর প্রাণশক্তি এবং আগামীতে তাদের যুদ্ধ করার সক্ষমতা নষ্ট করে দিতে পারে।
বাংলা/এনএস