• ১৮ জুন ২০২০ ১১:৫৩:৪১
  • ১৮ জুন ২০২০ ১১:৫৩:৪১
অন্যকে জানাতে পারেন: Facebook Twitter Google+ LinkedIn Save to Facebook প্রিন্ট করুন
বিজ্ঞাপন

বর্ণবাদ, শ্রেণিবাদ কিংবা সাম্প্রদায়িকতা, সবই ধ্বংসাত্মক ঘাতক

ছবি : সংগৃহীত


যূথিকা গোলদার


এই তো কিছুদিন আগেও গোটা বিশ্বের অনেকেই নিয়ে বর্ণবাদ নিয়ে সোচ্চার হয়ে উঠেছিলো, পথে নেমেছিলো বর্ণভেদে নানান দেশের নানান জাতীয়তার মানুষ। পরিবর্তন আসছে এই ভেবে স্বস্তির নিঃশ্বাসও ফেলেছি আমরা অনেকেই। কিন্তু হাজার বছরের লালিত সংস্কার রাতারাতি উবে যায়না, এটাই কঠিন সত্য।

আজো ইনিয়ে বিনিয়ে ভদ্রভাষাতেও চলছে বর্ণবাদী কর্মকাণ্ড, দারুণ বেগে। আমাদের ঘিরে কিছু শ্বেতাঙ্গ রয়েছেন যারা ধরেই নেন যে গায়ের রং গৌরবর্ণ না হলে ভদ্র, সভ্য কিংবা প্রভাব প্রতিপত্তিশীল হওয়া অসম্ভব।

সাম্প্রতিক ঘটে যাওয়া আরো একটি ঘটনা বর্ণবাদী শ্বেতাঙ্গদের কুৎসিত মনোভাবের প্রতিফলন ঘটায়। সানফ্রান্সিসকো’র একটি প্রসাধনী কোম্পানির সিইও লিসা আলেক্সান্ডার এবং তার পার্টনার রবার্ট লারকিন বাস করেন এক পরিপাটি বিত্তশালী আবাসিক এলাকাতে। রাস্তা দিয়ে হেঁটে চলবার সময় তাদের চোখে পড়ে এক বাদামী বর্ণের ফিলিপিনো ভদ্রলোক বাড়ির সামনের দেওয়ালে চক দিয়ে লিখছেন, “ব্লাক লাইভস ম্যাটার”।

ভদ্রমহিলা তার সুললিত কণ্ঠে অতিব ভদ্র ভাষাতে ফিলিপিনো ভদ্রলোক জেমস জুয়ানিলোকে বললেন যে, অন্যের প্রপার্টিতে এমনি করে চক দিয়ে তিনি লিখতে পারেন না।

জেমস পাল্টা জিজ্ঞেস করলেন, “আপনি কি করে জানলেন যে এটা অন্যের সম্পত্তি?”

ভদ্রমহিলা আর তার পার্টনার সমস্বরে বলে চললেন যে তারা এই আবাসিক এলাকারই, এখানে বসবাসরত লোকজনদের তারা ভালো করেই চেনেন।

আসল সত্যটা হলো, ফিলিপিনো ভদ্রলোক তার নিজের বাড়ির দেওয়ালেই চক দিয়ে লিখছিলেন এবং ঐ শ্বেতাঙ্গ দম্পত্তি না জেনেই বর্ণবাদী স্বভাবের কালো থাবা বসিয়ে গেলেন। শুধু তাই নয়, ফিলিপিনো ভদ্রলোককে গ্রেপ্তার করাবার জন্যে তারা নাকি পুলিশও ডেকেছিলেন।

প্রশ্ন হলো, বাদামী বর্ণের ফিলিপিনো’র কি উচ্চবিত্ত এলাকাতে বাড়ি কিনবার অধিকার নেই? নাকি বর্ণই নির্ধারণ করে দেয় অর্থনৈতিক সামর্থ্যের মাপকাঠি?

উন্নত প্রযুক্তির এ যুগে এমন সব ঘটনার প্রমাণ রাখবার জন্যে ভিডিও রেকর্ডিং এক আশীর্বাদ হয়ে দেখা দিয়েছে। তারপর, ধারণকৃত ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়াতে প্রচারিত হবার সুবাদে জনগণ জানতে পারছে ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলোর খানিক বৃত্তান্ত । যদিও কখনো কখনো ভিডিও’র অংশবিশেষ দেখে আমরা বিভ্রান্ত হই, তবুও অনেক ক্ষেত্রেই সত্যটা সামনে আসছে সোশ্যাল মিডিয়ার কল্যাণেই। 

আজো আশার আলো ক্ষীণ হলেও তার রশ্মি দেখতে পাই। এই বিশেষ ঘটনাটিতে বর্ণবাদের জয় হয়নি। ভদ্রমহিলা তার চাকরি হারিয়েছেন, সঙ্গে তার স্বামীও বর্ণবাদী কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকবার অপরাধে রেইমন্ড জেমস নামক ফাইনান্সিয়াল নামের প্রতিষ্ঠান থেকে চাকরিচ্যুত হয়েছেন।

ক্যালিফোর্নিয়া একটি লিবারেল অঙ্গরাজ্য হবার সুবাদে হয়তো বর্ণবাদকে হালকা ভাবে নেওয়া হয়নি, চাকরিচ্যুতির মত ঘটনা ঘটেছে এবং সেটা হয়েছে খুব দ্রুত।

তড়িৎ সাজা পাবার পর জনৈকা শ্বেতাঙ্গিনী তার কৃতকর্মের জন্যে ক্ষমা চেয়েছেন।

প্রচণ্ড অহমিকাসম্পন্ন কারো পক্ষে ক্ষমা চাওয়াটাও খুব সহজ কাজ নয়, তবু তিনি ক্ষমা চেয়েছেন। কিন্তু সব অপরাধ কি ক্ষমার যোগ্য? অত বড় একটি পদ থেকে যদি তাকে চাকরিচ্যুত করা না হতো তবে কি তিনি ক্ষমা চাইতেন? মধ্যবয়সী একজন ভদ্রমহিলা যার মাঝে বর্ণবাদ গাঁথা রয়েছে শক্ত গাঁথুনি দিয়ে, অন্য বর্ণের মানুষকে হেয় করে দেখাই যার স্বভাব তিনি কি অকস্মাৎ শুধরে যাবেন? 

অনেক অধিবাসীদের প্রাত্যহিক জীবনে এমনি ছোটখাটো ঘটনা ঘটে চলেছে। কখনো অধিবাসীরা তা উপেক্ষা করে চলেন কখনো বা মনের মাঝে দাগ কাটলেও বাইরে সে ভাবের বহিঃপ্রকাশ ঘটাননা।

আমার ২৫ বছরের প্রবাস জীবনে আমি ব্যক্তিগত ভাবে আজো এমন কোনো বর্ণবাদের শিকার হইনি, কিন্তু আমার জীবনে ঘটছে না বলে যে তা অন্য কারো জীবনে ঘটছে না এমন সত্যতেও আমি অন্ধবিশ্বাসী নই।

বর্ণবাদ, শ্রেণিবাদ কিংবা সাম্প্রদায়িকতা এ সবই এক একটি ধ্বংসাত্মক নীরব অস্ত্রের নাম- যার আঘাত আপাতদৃষ্টিতে যদি দৃশ্যমান নাও হয় তবু তা ঘাতক। মানবতার ঘাতক এই অস্ত্রের  দাপট নির্মূল হোক, নীরব ক্ষরণ বন্ধ হোক।

লেখক : ট্রাফিক ডিজাইন ইঞ্জিনিয়ার, ডিপার্টমেন্ট অফ ট্রান্সপোর্টেশন, যুক্তরাষ্ট্র।

বাংলা/এসএ/

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
Page rendered in: 0.1430 seconds.