ফাইল ছবি
বিজ্ঞানীরা ইতালিতে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হওয়ার অনেক আগেই দেশটির বর্জ্য পানিতে করোনাভাইরাসের অস্তিত্ব পেয়েছিলেন। দ্য ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব হেলথের (আইএসএস) বরাত দিয়ে এক প্রতিবেদনে এমন তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ গণমাধ্যম বিবিসি।
তাদের প্রতিবেদনে বলা হয়, ইতালিতে প্রথম করোনাভাইরাস আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হওয়ার অনেক আগেই গত ১৮ ডিসেম্বর দেশটির মিলান ও তুরিন শহরের বর্জ্য পানিতে ভাইরাসের অস্তিত্ব খুঁজে পেয়েছিলেন বিজ্ঞানীরা। এর মাধ্যমে প্রতীয়মান হয় যে বিশ্বের অন্যান্য দেশে যখন ভাইরাসটি ছড়িয়ে পড়ছিল বলে মনে করা হচ্ছে, তার আগে থেকেই এটির ছড়িয়ে পড়া শুরু হয়।
গত ডিসেম্বরের শেষ দিকে হুবেই প্রদেশের রাজধানী উহানে প্রথম করোনা রোগী শনাক্তের বিষয়টি নিশ্চিত করেন চীনা কর্মকর্তারা। এর প্রায় মাসখানেক পর ২৩ জানুয়ারি হুবেই প্রদেশের দুজন পর্যটক ইতালির মিলান বিমানবন্দর দিয়ে প্রবেশের কিছুদিন পরই রোমে গিয়ে অসুস্থ হন। তাদের মধ্যে করোনা ধরা পড়ে।
৬ ফেব্রুয়ারি চীনের উহান থেকে দেশে ফেরেন এক ইতালীয় নাগরিক। ওই তিনজনই ইতালিতে ধরা পড়া প্রথম করোনা রোগী। তবে দেশটিতে করোনায় প্রথম মৃত্যু হয় ২২ ফেব্রুয়ারি। দেশটির উত্তরাঞ্চলীয় শহর পাদুয়ায় মৃত্যু হয় ৭৮ বছর বয়সী ওই ব্যক্তির।
এদিকে নমুনা পরীক্ষা করে ফরাসি বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, গত ডিসেম্বরের ২৭ তারিখে প্যারিসের কাছে নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত একজন রোগীর চিকিৎসা করা হয়েছিল, যিনি মূলত করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ছিলেন।
অপরদিকে জানুয়ারির মাঝামাঝি সময়ে বার্সেলোনা থেকে সংগ্রহ করা বর্জ্য পানিতে ভাইরাসের অস্তিত্ব পাওয়া গেছে বলে অপর এক গবেষণায় জানা গেছে। যা স্পেনে স্থানীয়ভাবে প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত হওয়ার প্রায় ৪০ দিন আগের ঘটনা।
এর আগে আইএসএসের বিজ্ঞানীরা গত বছরের অক্টোবর থেকে এ বছরের ফেব্রুয়ারি মাসের মধ্যে উত্তর ইতালির বর্জ্য পানি শোধনাগার থেকে ৪০টি নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষা করেন।
আইএসএসের পানি বিশেষজ্ঞ গুইসেপিনা লা রোজা এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘অক্টোবর ও নভেম্বর মাসের নমুনাগুলো পরীক্ষা করে ভাইরাসের অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি। তবে জানুয়ারিতে বোলোগনা থেকে সংগ্রহ করা বর্জ্য পানিতে ভাইরাসের অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায়।’
এ গবেষণাগুলো ইতালিতে কীভাবে ভাইরাস ছড়িয়ে পড়েছিল তা বুঝতে বিজ্ঞানীদের সহায়তা করতে পারে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝিতে দেশটির লোম্বার্ডি অঞ্চলের কোডোগনো শহরে স্থানীয়ভাবে প্রথম করোনা আক্রান্ত রোগী শনাক্ত করা হয়। এরপর ২১ ফেব্রুয়ারি ওই শহরটি লকডাউন করে ‘রেড জোন’ ঘোষণা করে স্থানীয় প্রশাসন।
পরবর্তীতের ওই অঞ্চলের ভেনেতোসহ আরো নয়টি শহর লকডাউন করা হয়। আর মার্চের প্রথম দিকে গোটা দেশে লকডাউন ঘোষণা করে দেশটির সরকার।
পরিসংখ্যানভিত্তিক ওয়েবসাইট ওয়ার্ল্ডোমিটারের তথ্য অনুযায়ী, আজ ২০ জুন, শনিবার বেলা দেড়টা পর্যন্ত ইতালিতে ২ লাখ ৩৮ হাজার ১১ জনের শরীরে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে, যা বিশ্বে অষ্টম সর্বোচ্চ। এদের মধ্যে ৩৪ হাজার ৫৬১ জন ইতোমধ্যে মারা গেছেন। বিপরীতে ১ লাখ ৮১ হাজার ৯০৭ জন সুস্থ হয়ে উঠেছেন। এখনো যে ২১ হাজার ৫৪৩ জন চিকিৎসাধীন রয়েছেন, তাদের মধ্যে ১৬১ জনের অবস্থা গুরুতর।
বাংলা/এসএ/