ছবি: বিবিসি থেকে নেয়া
দেশে বর্ষাকালে প্রতি বছর অন্তত পাঁচ লাখ আশি হাজার মানুষ সাপের দংশনের শিকার হন। আর সাপের কামড়ে অন্তত ছয় হাজার মানুষের মৃত্যু হয়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ২০১৯ সালের অক্টোবরে প্রকাশিত সর্বশেষ প্রতিবেদনে এই তথ্য উঠে আসে।
বিশেষজ্ঞরা জানান, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, রাজশাহী এবং ময়মনসিংহ এলাকায় সাপের কামড় এবং তা থেকে মৃত্যুর ঘটনা বেশি ঘটে। বাংলাদেশে ৮০টি প্রজাতির সাপ রয়েছে। এছাড়াও সামুদ্রিক সাপও অত্যন্ত বিষাক্ত হয়। বাংলাদেশে ২৩ ধরণের সামুদ্রিক সাপ রয়েছে। এসব সাপ সমুদ্রে যাওয়া জেলেদের দংশন করে। তবে সমুদ্রের গভীরে তাদের অবস্থান হওয়ায় সাধারণত এই সাপের কামড়ের ঘটনা বিরল।
বাংলাদেশ টক্সিকোলজি সোসাইটি সাপ ও সাপের বিষ নিয়ে কাজ করে। এই সংস্থাটির প্রধান অধ্যাপক এমএ ফায়েজ বলেন, দেশে যেসব সাপ রয়েছে, তার মধ্যে সাত থেকে আট প্রজাতির অত্যন্ত বিষধর সাপের কামড়ে মানুষ বেশি মারা যায়।
সাপগুলো হলো- নায়া নায়া, নায়া কাউচিয়া, কিং কোবরা বা শঙ্খচূড়, ক্রেইট বা শঙ্খিনী, কালো নাইজার, চন্দ্রবোড়া বা রাসেলস ভাইপার এবং সবুজ বোড়া।
প্রতিকার :
সাপে কাটলেই মানুষের মৃত্যু হবে এমন একটি প্রচলিত ভুল ধারণা চালু আছে। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের অধ্যাপক অনিরুদ্ধ ঘোষ বলেন, বাংলাদেশে ৮০ শতাংশ সর্প দংশনের ক্ষেত্রে সাপ থাকে নির্বিষ। ফলে সাপে কাটলেই মৃত্যু হবে এমন ধারণা সঠিক নয়। তবে, সাপ যদি দংশন করে তাহলে যত দ্রুত সম্ভব সাপে কামড়ানোর ওষুধ বা অ্যান্টিভেনম প্রয়োগ করতে হবে। তাহলে মৃত্যু ঠেকানো সম্ভব।
বাংলাদেশের স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী দেশে যে অ্যান্টিভেনম ব্যবহার করা হয়, তা মূলত ভারতের তামিলনাড়ু থেকে আসে।
অধিদপ্তরের অসংক্রামক ব্যাধি বিভাগের লাইন ডিরেক্টর ডা. হাবিবুর রহমান বলেন, সরকারি ব্যবস্থাপনায় বছরে পাঁচ কোটি টাকার কিছু বেশি পরিমাণ অ্যান্টিভেনম আমদানি করা হয় দেশে।
এই অ্যান্টিভেনম ‘অনুপযুক্ত’ এবং ‘অপ্রয়োজনীয়’ এমন সমালোচনা রয়েছে।
টক্সিকোলজি সোসাইটির অধ্যাপক ফায়েজ বলেন, বাংলাদেশে যে অ্যান্টিভেনম আনা হয়, সেটি মূলত চারটি সাপের বিষের একটি ‘ককটেল’ বা মিশ্রণ, যা কিছু সাপের দংশন নিরাময়ে কাজ করে। বাকি ক্ষেত্রে সেগুলো আংশিক কাজ করে।
তিনি আরো বলেন, পৃথিবীর সবচেয়ে বিষধর সাপের একটি ব্ল্যাক মাম্বা। এটি একেবারেই যথার্থ নয়। তামিলনাড়ু স্থানীয় সাপের বিষ দিয়ে তারা তাদের অ্যান্টিভেনম তৈরি করে থাকে। সেখানকার সাপ এবং সাপের বিষের সাথে আমাদের দেশের সাপের বিষে ফারাক আছে। ভারত থেকে যে অ্যান্টিভেনম আনা হয়, তার মাত্র ২০ শতাংশ বাংলাদেশের সাপের সঙ্গে মেলে।
এ বিষয়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশনা হচ্ছে, যেখানকার মানুষকে সাপ কেটেছে, সেখানকার স্থানীয় সাপ থেকে অ্যান্টিভেনম তৈরি করে চিকিৎসা দিতে হবে। না হলে তা কার্যকর হয় না।
সাপে কাটলে কী করবেন?
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের অধ্যাপক অনিরুদ্ধ ঘোষ। তিনি সাপের দংশন এবং অ্যান্টিভেনম নিয়ে গবেষণা করেন। তিনি বলেন, সাপ কাটলে কী করতে হবে, তার সঙ্গে কী করবেন না- দুইটাই জেনে রাখতে হবে। নিচে তার পরামর্শ তুলে ধরা হলো-
কী করবেন :
১. দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হোন।
২. হাত বা পা ভাঙলে যেমন করে শক্ত কিছু দিয়ে কাপড় দিয়ে হলকা করে বাধা হয়, সেভাবে বাধুন।
৩. সাপে কাটা পেশী যতটা কম সম্ভব নড়াচড়া করুন, পেশীর নড়াচড়া যত কম হবে, বিষ তত কম ছড়াবে।
কী করবেন না :
১. আতংকিত হওয়া যাবে না।
২. ওঝা বা ঝাড়ফুঁকের অপেক্ষা করে কালক্ষেপণ করবেন না।
৩. চিকিৎসক দেখার আগ পর্যন্ত কিছু খাওয়া উচিত না।
৪. কোন মলম বা মালিশ লাগানো উচিত না।
৫. সাপে কাটা জায়গায় শক্ত করে বাঁধা, কারণ রক্ত জমে গিয়ে আক্রান্ত ব্যক্তি পঙ্গু হয়ে যেতে পারেন।
সূত্র : বিবিসি
বাংলা/এনএস