কাকন রেজা। ফাইল ছবি
কাকন রেজা:
বিশ্বাস করেন কানাডার বেগমপাড়া আপনাদের সাংস্কৃতিক বিপ্লবের ফসল। ভাস্কর্য মূর্তি নিয়ে আজকে টানাটানি তাও আপনাদের বিপ্লবী কর্মকাণ্ডের অন্ত্যজ ফল। না, শুকনো গাঁজায় দম দিইনি। বুঝে-শুনেই বলছি। আপনাদের দ্বিচরিত্র দেখেই বলছি। জ্ঞান হওয়া অবধি দেশের এক শ্রেণির পাবলিককে বলতে শুনেছি, ধর্মকে রাজনীতির বাইরে রাখার কথা। ব্যক্তিগত ভাবে আমিও তেমনটা ভাবি। রাজনীতির যে অবস্থা তাতে এখানে ধর্ম কেন শুদ্ধ যে কোনো বিষয়ই এর থেকে আলাদা থাকা উচিত।
‘সঙ্গদোষে লোহা ভাসে’ বলে একটা কথা রয়েছে। যারা ধর্ম অনুশীলন করেন, তারা যদি এই রাজনীতি করতে যান, তাহলে তাদের বেগমপাড়ায় হেরেম বানানোর চিন্তা মাথায় আসতে পারে। বিশেষ করে দুর্বল মনের মানুষের, সৌদি আরবের কোনো কোনো শেখদের মতন। দেশে পারেন না বলে, বিদেশে ক্যাসিনো আর পার্লারে যান। আর যাদের সে উপায় নেই, তারা বাংলাদেশসহ গরীব দেশের গরীব মেয়েদের উপর নজর দেন। যাদের অনেকেই লাশ হয়ে দেশে ফিরে আসেন। সুতরাং দুর্বল মানুষদের জন্য এমন সঙ্গ পরিত্যাজ্য হওয়াই উচিত, যা ক্রমে সঙ্গদোষ হয়ে ওঠে।
ইতোমধ্যে সঙ্গদোষে লোহা ভাসতে শুরু করেছে। এই মাদ্রাসায় বলাৎকার তা সে সঙ্গদোষেই। বিকল্প হিসেবে শিশুকাম। হ্যাঁ, ক্যাসিনো, ম্যাসেজ পার্লারে না যেতে পারা দুর্বল মনের মানুষদের বিকল্প। পুরোহিত ও যাজকদের শিশুকাম তা থেকেই। যেখানে যার সংখ্যা বেশি তার নাম উপরে উঠে আসে। ইউরোপে চার্চের যাজকদের যৌন কেলেঙ্কারির বিশাল এক ফিরিস্তি গুগলে সার্চ করলেই পেয়ে যাবেন। ভারতে পুরোহিতদেরও বাদ যাবে না।
বলতে পারেন, এর সাথে সাংস্কৃতিক বিপ্লবের সম্পর্ক কী। সম্পর্ক বলার আগে হালের কিছু জ্ঞানী-গুণী পাবলিকের আহাজারির কথা বলি। তারা বলছেন, ধর্মাশ্রয়ী দল বা সংগঠনগুলো মানুষের না পাওয়ার কথা কিছু বলছে না। এই যে পাট ও চিনিকলসহ কলকারখানা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। শ্রমিকরা বেকার হচ্ছে। এই যে চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে মানুষ। বিভিন্ন সেক্টরে লুটপাট চলছে, এগুলো নিয়ে সে সব দল বা সংগঠন কথা বলছে না। মিলিয়ে দেখুন তো, আমি যে বলেছি জ্ঞান হওয়া অবধি ধর্মকে আলাদা রাখার আপনাদের যে বয়ান, তার সাথে আপনাদের হালের বক্তব্য যায় কিনা? যায় না তো। সাংস্কৃতিক বিপ্লবের সাথে সম্পর্কটা এইখানেই। আপনি সংস্কৃতিটাই বুঝে উঠতে পারেননি। সংস্কৃতি কাকে বলে তা নিয়ে আপনার নিজস্ব চিন্তার জগৎ গড়ে ওঠেনি। আপনি মুখস্ত করেছেন অন্যের শিখিয়ে দেয়া ভুল বুলি। আপনি মানুষ না হয়ে তোতা পাখি হয়ে উঠেছেন। ‘দেশাচার’ শব্দটি আপনার অভিধানে নেই।
বারবার বলেছি, আবার বলছি, সংস্কৃতি হলো মানুষের জীবনাচরণের নির্যাস। আর মানুষের জীবনাচরণ, সামাজিক আচরণের মূল অংশটাই আসে ধর্ম থেকে। ধর্মের আচার সামাজিক জীবনের আচরণ হয়ে ওঠে। আপনি ধান-দূর্বা দিয়ে বর-বধূ বরণ করে নেন, এই সামাজিক আচরণও ধর্ম থেকে আসা। এই যে হালে বাংলাদেশেও শুরু হয়েছে ‘থ্যাঙ্কস গিভিং ডে’ নামক পশ্চিমা সংস্কৃতির। এই ‘ডে’ও এসেছে ধর্মাচরণ থেকেই। ভারতের বাঙালি হিন্দু তথা সনাতনী সংস্কৃতির অংশ ধান-দূর্বা দিয়ে বধূবরণ। আমাদের দেশের বাঙালরাও তা আত্মস্থ করেছে। যেহেতু এর সাথে ইসলামের সরাসরি কোনো সাংঘর্ষিক অবস্থা নেই, তাই আমাদের সামাজিক আচরণের সাথে মিশে গেছে এই বিষয়গুলো। অর্থাৎ গ্রহণের সম্ভবগুলো গ্রহণ করা হয়েছে। ‘থ্যাঙ্কস গিভিং ডে’র সাথেও যদি সাংঘর্ষিক ব্যাপার না থাকে তবে গ্রহণ করতে বাধা থাকবে না। কিন্তু সাংঘর্ষিকগুলি রয়ে গেছে আলাদা। আর তা থাকাই উচিত। কারণ, সাংঘর্ষিক বিষয়গুলো যখন এক করে দেয়ার চেষ্টা হবে তখন ব্যাকরণগত ভাবেই সংঘর্ষ অনিবার্য। আর এই সংঘর্ষ কথিত সাংস্কৃতিক বিপ্লবের ভুল শিক্ষার ফসল। দেশাচার না বুঝে ওঠার গন্ধম ফল। যে ফল খাওয়ায় আমাদের এক সময়ের স্বর্গ আজ নরক হতে চলেছে।
পুনশ্চ: সুন্দর গড়তে গিয়ে কীভাবে ‘বান্দর’ গড়ে ওঠে তা দেখেছিলাম বিটিভিতে প্রচারিত একটি অনুষ্ঠানে। না মানে, যখন বিটিভি লাইন দিয়ে দেখতো মানুষ তখনের কথা বলছি। বলতে পারেন, দেখার মতো ছিলো যখন। সে অনুষ্ঠানে একজন শিল্পীকে বলা হলো বর্ণনা অনুযায়ী সুন্দরী নারীর ছবি আঁকতে। তাকে বলা হলো পটলচেরা চোখের কথা, তিনি চেরা পটল আঁকলেন। কমলার কোয়ার মতন ঠোঁট, তিনি আঁকলেন। বাঁশির মতন নাক, আপেলের মতন গালও আঁকলেন। মুক্তার মতন দাঁতও বাদ গেলো না। তারপর যখন ছবিটা দেখানো হলো তখন চক্ষু চড়কগাছ। বুঝলেন তো চিত্রটা কেমন দাঁড়িয়েছিল। ওই যে ‘জানতে জানতে জানোয়ার’ এর মতন অবস্থা আর কী। বিভৎস সুন্দর!
এই বিভৎস সুন্দরের দর্শন মিলছে এখন। এই যে অমুক অসাংস্কৃতিক। তমুক থাকলে সংস্কৃতির শ্লীলতাহানি হবে। এমনটা বলে বলেই সাংস্কৃতিক বিপ্লবের আড়ালে বেড়ে উঠেছে প্রতিবিপ্লব। যা ফ্রাঙ্কেনস্টাইন হয়ে আপনাদের সাংস্কৃতিক প্যান্ট খুলে পাজামা পরাতে চাইছে। আপনারা সেই পাজামার দড়ি বাঁধতে বাঁধতে এখনো বলে যাচ্ছেন, বিপ্লব সফল হোক। সেল্যুকাস, কি বিচিত্র এই সাংস্কৃতিক বিপ্লব।!
লেখক: সাংবাদিক ও কলামনিস্ট।