ছবি : সংগৃহীত
‘সাম্রাজ্যের মন ও মান’ ভারতে ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক চরিত্র বিশ্লেষণ করার ক্ষেত্রে বহু ঐতিহাসিক সত্য উন্মোচনকারী একটি অনন্য অনুবাদ গ্রন্থ। বইটি লিখেছেন বারনারড কোহন, আর তা বাংলায় অনুবাদ করেছেন বিশ্বেন্দু নন্দ।
লেখক বারনারড কোহন দক্ষিণ এশিয়ার ৩০০ বছরের ইতিহাসে ঔপনিবেশিক চরিত্র এবং এ অঞ্চলের কৃষ্টিগত পরিবর্তনের বিষয়টি গভীর আগ্রহের সঙ্গে বিশ্লেষণ করেন। মূলত, ভারতকে দেখা হতো ইউরোপের পণ্য সরবরাহের অন্যতম উৎস হিসেবে। তারা বলপ্রয়োগ করে সাম্রাজ্যের ভিত তৈরি করেছে, লুট কার্যকে সহজ স্বাভাবিক করতে গিয়ে এ দেশীয়দের সহায়তায় নানান কৃষ্টিগত পরিবর্তন করতে হয়েছে, নতুন কাঠামো তৈরি করতে হয়েছে।
প্রথমত, তারা বহু ঐতিহাসিক সত্যকে গোপন করেছে। নিজের সুবিধামত অনেক তথ্যকে সাজিয়েছে। বহু বিষয়কে অতিরঞ্জিত করে প্রকাশ ও প্রচার করেছে। প্রথমেই তারা ভাষার উপরে আধিপত্য বিস্তার করেছিল। তারা গোপনীয়তা প্রকাশ হয়ে পড়বে এজন্য ফারসি সংস্কৃত, বাংলা এসব ভাষা শিখতে চেষ্টা করে এবং এতে শাসনকার্য চালানোও সহজ হবে। কিন্তু ভারতে ছিলো অনেক ভাষা। এজন্য ইংরেজদের প্রচুর মিথ্যা ও বিকৃতির আশ্রয় নিতে হয়েছিল।
ইংরেজরা প্রচলিত আইনকে অনেকটাই বদলে দেয়। হস্তশিল্পকে যন্ত্রশিল্পে রূপান্তর করে। বস্ত্র, পরিধেয়কে তারা ভিন্ন আঙ্গিক ও পরিচিতি দেয়।
এই বইটি পড়লে ঔপনিবেশিক শাসনামলের বহু অজানা চিত্র চোখের সামনে ভাসতে থাকবে। ইংরেজরা এদেশীয় চাকুরেদের কোন ভাষায় শাসন করবে, কীভাবে মালিক চাকর দূরত্ব বজায় রাখবে- সে সম্পর্কে রীতিমত প্রশিক্ষণ দিতো। ভৃত্যদের প্রতি কী আচরণ হবে সেই কৌশলও তারা শিক্ষা দিতেন।
তাদের শিক্ষার অন্যতম একটি দিক এটা ছিলো- কখনই অধীনস্থের প্রশংসা করতে নেই, প্রতিনিয়ত তাদের ভুল ধরতে হবে এবং সবসময় তাদের সঙ্গে রূঢ় আচরণ করতে হবে।
অনুবাদক বিশ্বেন্দু নন্দী কারিগরি ব্যবস্থা, পলাশী-পূর্ব বাংলা, পলাশী-উত্তর বাংলায় ব্রিটিশ লুঠ-খুন-গণহত্যা-অভিচার-দখলদারী বিষয়ে গবেষণারত। তিনি ‘পলাশীর পূর্বে বাংলার ৫০ বছর, পলাশীর পূর্বে বাংলার বাণিজ্য’ ইত্যাদি মৌলিক গ্রন্থের প্রণেতা। তিনি অত্যন্ত দক্ষভাবে বারনারড কোহনের বইটি অনুবাদ করেছেন।
যে কেউ ইংরেজদের লোভ, লুঠ, মিথ্যাচার বিষয়ে জানতে আগ্রহী হলে বইটি পড়তে পারেন। বইটি বাতিঘরে পাওয়া যাচ্ছে।
‘সাম্রাজ্যের মন ও মান’ বইটির প্রকাশক হলেন নাহিদ হাসান। প্রকাশনায়- ডাকঘর, প্রেসক্লাব, রংপুর। পরিবেশক- বাতিঘর।
বাংলা/এনএস