ঐতিহ্যবাহী ভবনটি ভেঙে নেয়ার দৃশ্য। ছবি : সংগৃহীত
ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের স্মৃতি বিজড়িত শিশুবাগ স্কুলের ভবন ভাঙার ওপর নিষেধাজ্ঞা চেয়ে হাইকোর্টে রিট দায়ের করা হয়েছে। রিটে ভবনটিকে ঐতিহাসিক স্থাপনা ঘোষণার নির্দেশনা চাওয়া হয়েছে।
আজ ৬ জানুয়ারি, বুধবার বিচারপতি জে বি এম হাসান ও বিচারপতি মো. খায়রুল আলমের হাইকোর্ট বেঞ্চে এই রিট আবেদনটির ওপর শুনানি হওয়ার কথা রয়েছে। সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট মাসুদ আলম চৌধুরী এ রিট দায়ের করেন।
সংস্কৃতি সচিবসহ সংশ্লিষ্টদের রিটে বিবাদী করা হয়েছে। রিটে পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদন সংযুক্ত করা হয়েছে।
পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, চট্রগ্রামের রহমতগঞ্জ এলাকার শিশুবাগ স্কুলের ভবন ভাঙা নিয়ে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছে।
৪ জানুয়ারি দুপুরে ভবন ভাঙাকালীন দুই পক্ষকে মুখোমুখি অবস্থান নিতে দেখা যায়। পরে হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট রানা দাশগুপ্তসহ বিভিন্নজনের হস্তক্ষেপে ভবন ভাঙা স্থগিত রাখা হয়। যদিও এর আগেই স্কুলের বেঞ্চ-টেবিলসহ বিভিন্ন সরঞ্জামাদি বের করে ভবনের উপরের একাংশ বুলডোজার দিয়ে গুঁড়িয়ে দেয়া হয়।
স্থানীয়দের দাবি, স্কুলটি ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের স্মৃতিবিজড়িত বাড়ি। যা ঐতিহাসিক নিদর্শন হিসেবে দাঁড়িয়ে আছে। ভারতীয় কংগ্রেসের নেতা যাত্রামোহন সেনগুপ্ত এই বাড়িটি নির্মাণ করেছিলেন। চট্টগ্রামের এই আইনজীবীর ছেলে হলেন দেশপ্রিয় যতীন্দ্রমোহন সেনগুপ্ত। ব্যারিস্টার যতীন্দ্রমোহনও ছিলেন সর্বভারতীয় কংগ্রেসের নেতা। তিনি কলকাতার মেয়রও হয়েছিলেন। ইংরেজ স্ত্রী নেলী সেনগুপ্তাকে নিয়ে কিছু দিন ভবনটিতে ছিলেন তিনি।
মহাত্মা গান্ধী, সুভাষ চন্দ্র বসু, শরৎ বসু, মোহাম্মদ আলী ও শওকত আলীসহ কংগ্রেসের শীর্ষ নেতারা বিভিন্ন সময় এই বাড়িতে এসেছিলেন। ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের বিপ্লবীরাও এই বাড়ির সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন। সূর্য সেন, অনন্ত সিংহ, অম্বিকা চক্রবর্তীর হয়ে মামলা লড়েছিলেন যতীন্দ্রমোহন। এতে ব্রিটিশ শাসকদের রোষানলে পড়ে ১৯৩৩ সালে কারাগারে মৃত্যু হয়েছিল যতীন্দ্রমোহনের। এরপর নেলী সেনগুপ্তা ১৯৭০ সাল পর্যন্ত রহমতগঞ্জের বাড়িটিতে ছিলেন।
১৯ গণ্ডা এক কড়া পরিমাণ জমিটি পরে শত্রু সম্পত্তি ঘোষিত হয়। এরপর জেলা প্রশাসনের কাছ থেকে শামসুদ্দিন মো. ইছহাক নামে এক ব্যক্তি জমিটি লিজ বা ইজারা নিয়ে ‘বাংলা কলেজ’ প্রতিষ্ঠা করেন সেখানে। পরে নাম বদলে সেই ভবনে ‘শিশুবাগ স্কুল’ প্রতিষ্ঠা করা হয়। ইছহাকের সন্তানরা স্কুলটি পরিচালনা করছেন। প্লে থেকে ৫ম শ্রেণি পর্যন্ত বর্তমানে প্রায় ৫ শতাধিক শিক্ষার্থী স্কুলটিতে অধ্যয়ন করছে বলে জানিয়েছেন শিশুবাগ স্কুলের পরিচালক আবু নাসের টিপু। কর্মরত শিক্ষকের সংখ্যা প্রায় ২০ জন বলেও জানান তিনি।