কাকন রেজা :
গণমাধ্যম ভর্তি টিকাদানের খবর। উৎসবমুখর পরিবেশে টিকা দেয়া হচ্ছে। ছবি এবং ভিডিওতে গাদাগাদি করা মানুষ সেই মুখরতার প্রমাণ। একজন খুব আনন্দিত মুখ করে বললেন, ‘দেখছেন টিকা দেয়া শুরু হইয়া গেছে। এখন আর কুনো চিন্তা নাই। কইছিলেন তো কত কথা। এহন দেহেন।’ কথা সত্যি, টিকা দেয়া শুরু হয়েছে। সরকারি একটা অ্যাপস রয়েছে নিবন্ধনের জন্য। সুরক্ষা নামে সেই অ্যাপসে পঞ্চান্ন বছরের ঊর্ধ্বের মানুষদের নিবন্ধন করা হচ্ছে। বলা হচ্ছে, সিরিয়াল হবে বয়স অনুযায়ী। সেই সিরিয়ালের কথা অন্য লেখায় বলবো। আপাতত বলে নিই টিকা উৎসবের কথা।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জানিয়েছে, টিকা নেয়ার পরও মাস্ক ব্যবহার করতে হবে এবং সামাজিক দূরত্ব মানতে হবে। স্বয়ং অ্যাস্ট্রা-জেনেকা যাদের তৈরি টিকা আমরা নিচ্ছি, তারাও বলছে, টিকা নেয়ার পরও পূর্বের সব বিধিনিষেধ মেনে চলতে হবে। আর এই টিকা নেয়ার সাথে সাথেই কার্যকর হয়ে ওঠে না। সময় লাগে। দ্বিতীয় ডোজের দুই সপ্তাহের পর টিকা পুরোপুরি কার্যকর হয়। তারপরেও কথা রয়েছে, এই টিকা কতটা কার্যকর সে বিষয়ে। বলা হচ্ছে, নব্বই ভাগের উপর কার্যকর। সে হিসেবেও কিন্তু একশ জনে কয়েকজন অনিরাপদ থেকে যাচ্ছেন। সুতরাং এই যে গাদাগাদি করে টিকা নেয়া। সামাজিক দূরত্বের ‘হাতে হারিকেন’ ধরিয়ে উৎসবমুখর পরিবেশ সৃষ্টি, তা কি স্বাস্থ্যবিধির সাথে যায়? যায় না।
আমাদের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার দুর্বলতা চিহ্নিত করতে এই উৎসবমুখর ছবি ও ভিডিও চিত্রই যথেষ্ট। বড় অনুসন্ধান কিংবা স্টিং অপারেশনের প্রয়োজন হয় না। প্রতিটা হাসপাতালে স্বয়ং চিকিৎসকদের সমুখে এবং সাথে চিকিৎসকরাও টিকা বিষয়ে ফটো সেশন করছেন। আগেই বলেছি গাদাগাদি অবস্থা। গণমাধ্যমকর্মীরাও সেই ছবি মহা উৎসাহ উদ্দিপনার সাথে তুলছেন। মাধ্যমগুলো সেই ছবি প্রকাশ করছে। অতএব বলার তো কিছু নেই।
গণমাধ্যমের কথা বলতে গেলে, মাঝে মাঝে অদ্ভুত লাগে। কোনটা খবর, কোনটা নয়, এটা নির্ধারণ করতে গিয়ে আমাদের অনেক মাধ্যমই কোথায় যেন থমকে যাচ্ছে। এক কথায় অনেক ক্ষেত্রেই উল্টো আচরণ করছে গণমাধ্যম এবং তার সাথে সংশ্লিষ্টরা। টিকার খবরের চেয়ে বেশি গুরুত্ব ছিলো এই যে স্বাস্থ্যবিধি ভাঙার ব্যাপারটি। কোথাও কোনো সামাজিক দূরত্ব নেই। মুখে অনেকেরই মাস্ক নেই। যিনি টিকা নিচ্ছেন তাদেরও কারো মুখে মাস্ক নজরে আসেনি। খবরটা হওয়া উচিত ছিলো এসব বিষয় নিয়ে। হয়েছে কি? হয়নি। অথচ এর সাথে মানুষের স্বাস্থ্য সুরক্ষা অর্থাৎ জীবন-মৃত্যু জড়িত। আমাদের মানুষের জীবন-মৃত্যু নিয়ে ভাবনা নেই, উৎসব নিয়ে আছে। বিচিত্র।
ফুটনোট : করোনাকালের প্রথমে যেমন ত্রাণ উৎসব হয়েছিলো, টিকা দেয়া নিয়েও সে উৎসব চলছে। ত্রাণ উৎসব সংক্রমনের হার বাড়িয়েছিলো। টিকা উৎসব কী করে তা সৃষ্টিকর্তাই মালুম।
লেখক : সাংবাদিক ও কলাম লেখক।