ছবি : সংগৃহীত
সেনা অভ্যুত্থানের দুই সপ্তাহের মধ্যে মিয়ানমারের বড় শহরগুলোতে ব্যাপক সংখ্যায় সেনাসদস্য দেখা যাচ্ছে। তারা সাঁজোয়া যান নিয়ে দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন শহরগুলোর সড়ক। অভ্যুত্থানের বিরোধিতায় কয়েকদিন বড় বড় বিক্ষোভ হয়েছে দেশটিতে। তাদের দমনেই সাঁজোয়া যানগুলো মোতায়েন করা হয়েছে বলে এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।
এদিকে স্থানীয় সময় গতকাল ১৪ ফেব্রুয়ারি, রবিবার রাত ১টা থেকে সে দেশে ইন্টারনেট সংযোগ প্রায় বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। আগের সপ্তাহেও একবার ইন্টারনেট বন্ধ করে দিয়েছিল সামরিক জান্তা।
মিয়ানমারের টেলিকম অপারেটররা জানিয়েছে, তাদেরকে রাত ১টা থেকে সকাল ৯টা পর্যন্ত ইন্টারনেট সংযোগ বন্ধ রাখার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
এদিকে সামরিক অভ্যুত্থানবিরোধী বিক্ষোভের নবম দিনে গতকাল দেশটির উত্তরাঞ্চলীয় কাচিন রাজ্যে একটি বিক্ষোভে গুলি ছুড়েছে সেনাবাহিনী। অন্যান্য অঞ্চলেও দমন-পীড়ন করে বিক্ষোভ ঠেকানোর চেষ্টা করছে জান্তা। এদিন দেশজুড়েই বিক্ষোভ-সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। বিক্ষোভ ঠেকাতে ব্যাপক ধরপাকড়ও চালিয়ে যাচ্ছে সেনাবাহিনী।
এদিকে মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর ধরপাকড়ের কঠোর সমালোচনা করে দেয়া বিবৃতিতে জাতিসংঘ অভিযোগ করেছে, সেনাবাহিনী মিয়ানমারের জনগণের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছে।
মিয়ানমারে জাতিসংঘের বিশেষ দূত টম অ্যান্ড্রু টুইটারে লিখেছেন, ‘অবস্থাটা এমন যে, মিয়ানমারের জেনারেলরা জনগণের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছেন। গভীর রাতে অভিযান, ব্যাপক গ্রেপ্তার, আরো অধিকার ছিনিয়ে নেয়া, আবার ইন্টারনেট বন্ধ, কমিউনিটির মাঝে সেনা মোতায়েন—এগুলো কঠোর অবস্থানের লক্ষণ। মনোযোগ দিয়ে শুনুন জেনারেলরা: আপনাদের জবাবহিদিতার আওতায় আনা হবে।’
এদিকে বিক্ষোভকারীদের প্রতি সহনশীল আচরণ করতে মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র-যুক্তরাজ্যসহ পশ্চিমাদেশগুলো।
গত ১ ফেব্রুয়ারি, সোমবার ভোরে এক অভিযানে সু চি, রাষ্ট্রপতি উয়িন মিন্টসহ শীর্ষ নেতাদের আটক করা হয় বলে এনএলডি’র মুখপাত্র মিও নয়েন্ট আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলোকে নিশ্চিত করেছেন। এর পরপরই দেশে জরুরি অবস্থা জারির ঘোষণা সেনা-নিয়ন্ত্রিত টেলিভিশনে প্রচার করা হয়।
দেশটির প্রভাবশালী সেনাবাহিনীর সাথে অং সান সু চি’র নেতৃত্বাধীন ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্রেসির (এনএলডি) বেসামরিক সরকারের বেশ কিছুদিন ধরে দ্বন্দ্ব চলছিল।
গত বছরের ৮ নভেম্বরের জাতীয় নির্বাচনে বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করে এনএলডি। তবে প্রতারণার অভিযোগ তুলে এই ফল মেনে নিতে অস্বীকার করে সেনাসমর্থিত ইউনিয়ন সলিডারিটি অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট পার্টি (ইউএসডিপি)। তারা নতুন নির্বাচনের দাবি জানিয়ে আসছিল।
এদিকে অভ্যুত্থানের পরপরই ফেসবুক, টুইটারসহ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলো বন্ধ করে দেয় সামরিক জান্তা। তবে এসব উপেক্ষা করেই নজিরবিহীন বিক্ষোভ করেছে মিয়ারমারের নাগরিকরা। তা ঠেকাতেই এবার কঠোর অবস্থানের ইঙ্গিত দিলো সেনা কর্তৃপক্ষ।
বাংলা/এসএ/