ছবি : সংগৃহীত
কুবি প্রতিনিধি:
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুবি) ১৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপনে নেই কোন জাঁকজমকপূর্ণ আয়োজন। র্যালি, কেক কাটা, সংক্ষিপ্ত আলোচনা সভায় সীমাবদ্ধ থাকবে এবারের আয়োজন। পাচঁ বছর পরও এমন দায়সারা আয়োজন নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করছেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মিতব্যয়ী হওয়ার কথা বলছেন।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্র জানা যায়, 'কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় দিবস-২০২২' উদযাপন উপলক্ষে গত ১৪ মে একটি আহ্বায়ক কমিটি গঠন করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। শিক্ষক সমিতির সভাপতি ড. দুলাল চন্দ্র নন্দীকে আহ্বায়ক করে ১৬ কমিটি সদস্য বিশিষ্ট এ কমিটি একটি প্রস্তাবনা দেয়। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বাজেট স্বল্পতার অজুহাতে বড় কোন প্রস্তবনা গ্রহণ করেনি। আজ (২৫ মে) বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেপুটি রেজিস্ট্রার মো. দলিলুর রহমান স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তি সূত্রে জানা যায়, এবারের বিশ্ববিদ্যালয় দিবসে র ্যালি, কেক কাটা, পায়রা উড়ানো, সংক্ষিপ্ত আলোচনা সভার মধ্যে দিয়ে পালন করা হবে। যার খরচ বাবদ বাজেট ধরা হয়েছে প্রায় ১ লক্ষ ৮৭ হাজার টাকা।
এদিকে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের দীর্ঘদিনের দাবি প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে স্বনামধন্য ব্যান্ডের কনসার্ট আয়োজনের। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের এমন জাঁকজমকহীন উদ্যােগে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ক্ষোভ প্রকাশ করছেন শিক্ষার্থীরা। অনেকে দিবসটি বয়কটের আহ্বান জানিয়েছে শিক্ষার্থীদের।
বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, গত ৫ বছর গ্রীষ্মে ছুটি, রমজানের ছুটির জন্য বড় পরিসরে বিশ্ববিদ্যালয় দিবসটি উদযাপন করা হয়নি। তাই এবারের আমাদের দাবি ছিল বড় পরিসরে ঝাকঁঝমকভাবে দিবসটি উদযাপনের উদ্যােগ নিবে প্রশাসন। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের এমন উদ্যােগ কোনভাবে গ্রহণযোগ্য নয়।
নৃবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী মুনিম হাসান বলেন, একটা বিশ্ববিদ্যালয় দিবসে এমন দায়সারা আয়োজন মেনে নেয়া যায় না। গত পাচঁ বছর গ্রীষ্মের বন্ধ, রমজানের কারণে দিবসটি সেভাবে উদযাপন করা হয়নি। কিন্তু আমরা এবছর ঝাকঁঝমকভাবে উদযাপন করবে সে আশায় ছিলাম। বিশ্ববিদ্যালয় দিবস সিনিয়র-জুনিয়রদের মিলনমেলায় পরিণত হয় ক্যাম্পাস। যা একাডেমিক পড়াশুনার পাশিপাশি সহশিক্ষা কার্যক্রমগুলোকে এগিয়ে নেয়। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের এমন উদ্যােগ দৃষ্টিকটু।
সিএসই বিভাগের শিক্ষার্থী মাহিম মোশারফ সেজান প্রোগ্রাম শিডিউলের ছবি পোস্ট করে ক্যাপশনে লিখেন, ৫ বছর পর কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় দিবস পালন করার বিশাল পরিকল্পনা! এই একটা প্রোগ্রাম নিয়ে আমরা কুবি শিক্ষার্থীরা অনেক বেশি আশাবাদী ছিলাম..।ডাস্টবিন ব্যবস্থাথা, খাবারের ভর্তুকি, ওয়াই-ফাই, হল নির্মাণ কাজ বছরের পর বছর আটকে থাকা সহ বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে সারাবছর তাগোরে (কুবি প্রশাসন) বলার পরও গায়ে ই লাগায় না! গন্ডারের চামড়া!!! ইমরান চৌধুরী স্যারকে খুব বেশি মিস করছি, উনি থাকলে আবারো একটা ধামাকা হইতো।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন শিক্ষক বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের ফান্ডে টাকা বলে দিবসটি দায়সারাভাবে উদযাপন করা হচ্ছে। একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ফান্ডে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপনের টাকা নেই কথাটা অযৌক্তিক।
'কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় দিবস-২০২২' উদযাপন কমিটির আহ্বয়ক ড. দুলাল চন্দ্র নন্দী বলেন, প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী দিবস উপলক্ষে একটি কেন্দ্রীয় কমিটি গঠন করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। শিক্ষার্থী ও কমিটির সদস্যদের মতামতের ভিত্তিতে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা, কেক কাটা, পায়রা উড়ানো, আলোচনা সভা, ক্যাম্পাসে সাজসজ্জা, কনসার্টের প্রস্তাবনা দেয়া হয়। এছাড়া আলোচনা সভায় অতিথি হিসেবে অর্থমন্ত্রী, শিক্ষামন্ত্রী, আইসিটি মন্ত্রীর নাম প্রস্তাব করা হয়। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন অধিকাংশ প্রস্তাবনা বাদ দিয়ে কয়েকটি প্রোগ্রাম রেখেছে এবং সে অনুযায়ী বরাদ্ধ দিয়েছে। এখন প্রশাসনের অনুষ্ঠান শিডিউল অনুযায়ী দিবসটি উদযাপন করা হবে।
এবিষয়ে উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ. এফ. এম. আবদুল মঈন বলেন, কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে বড় অনুষ্ঠান করে দিবস উদযাপন করে? বিশ্ববিদ্যালয় ছেলেদের আবেগ? আমার আবেগ কোথায় জানো, এ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বিসিএস দিয়ে, প্রফেসর হয়ে, গবেষক হয়ে, বিজ্ঞানী হয়ে, বিদেশে গিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের মান বৃদ্ধি করবে, বিশ্ববিদ্যালয়কে প্রতিনিধিত্ব করবে। আমরা কনসার্টের জন্য স্পন্সরশীপরের চেষ্টা করেছি। একটা কনসার্টের জন্য এত টাকা কে দিবে। আমি ক্লিয়ার করতে বলেছি যে এবছর দিবসটি উদযাপনের জন্য ফান্ডে কোন টাকাই নাই। মাত্র ৪ হাজার টাকা আছে। সামনের বছর যদি ফাইন্যান্সিয়ালি সার্পোট বাড়ে আমরা বড় পরিসরে উদযাপন করব।