ছবি : বাংলা
মো ফাহাদ বিন সাঈদ, জাককানইবি প্রতিনিধি:
জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ১২৩তম জন্মদিন পালিত হয়ে গেলো। যে স্মৃতির উপর ভিত্তি করে এদেশে নির্মিত হয়েছে অনেক অনেক স্থাপনা। কিশোর নজরুল যে বটগাছের নিচে বসে বাশি বাজাতেন সেই বটগাছকে কেন্দ্র করে ময়মনসিংহের ত্রিশালের নামাপাড়া শুকনি বিলের পাশে গড়ে উঠেছে নজরুলের নামে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়। যা নজরুলের নামে প্রতিষ্ঠিত দেশের সর্বোচ্চ প্রতিষ্ঠান। প্রতিষ্ঠার ১৫ বছর পর যে গাছকে কেন্দ্র করে বিশ্ববিদ্যালয় সমীনা প্রাচীরে নির্মানের নামে সেই বটবৃক্ষকেই বিশ্ববিদ্যালয়ের বাহিরে ছুড়ে ফেলেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
জানাযায়, ২০০৬ সালে ১৫ একর জমির উপর নির্মিত হয় জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়। শুরু থেকে বটবৃক্ষের পাশ দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের মুল ফটক থাকলেও আস্তে আস্তে ভবন নির্মানের নামে বটবৃক্ষটিকে আড়াল করা হয়। সবশেষ ২০২১ সালে সীমানা প্রাচীর নির্মানের সময় বটগাছটিকে বাহিরে রেখেই বিশ্ববিদ্যালয়ের সীমানা প্রাচীর নির্মান করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এতে নজরুলের স্মৃতি ধন্য বটগাছ ক্যাম্পাসের বাহিরে ও ভবনের আড়ালে থেকে যায়। যার নিচে এখন চায়ের দোকান আর টং দোকানের বাহারি সমাহার।জন্ম কে ভুলে গেছে বিশ্ববিদ্যালয় কতৃপক্ষ।
আজ থেকে ১০৭ বছর আগে ময়মনসিংহের ত্রিশালে এসেছিলেন কিশোর দুখু মিয়া। দুখু মিয়ার প্রতিভায় মুগ্ধ হয়ে দারোগা রফিজউল্লাহ তাঁকে ভর্তি করান দরিরামপুর ইংরেজি হাইস্কুলে (বর্তমান নজরুল একাডেমি)। প্রথমে কাজীর শিমলা দারোগা বাড়িতে থাকলেও যাতায়াতের কষ্ট লাঘবের জন্য দারোগা সাহেব দুখু মিয়ােেক ত্রিশালের নামাপাড়ায় জায়গির রাখেন। সেই দুখু মিয়া পরবর্তীতে হয়ে উঠেন বাঙ্গালীর বিদ্রোহী কবি জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম। স্বাধীনচেতা নজরুল ইসলাম মাঝেমধ্যে স্কুল বাদ দিয়ে শুকলি বিলের পামে বটবৃক্ষের চড়ে বাঁশি বাজাতেন। যে বটগাছে বসে দুখু মিয়া বাঁশি বাজাতেন, সেই গাছটিই এখন নজরুল বটবৃক্ষ নামে পরিচিত।
নজরুলের সৃতিকে ধরে রাখতে বটবৃক্ষকে কেন্দ্র করেই নজরুল প্রেমিরা দাবী করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার। সেই বটগাছের পাশেই শুকনি বিলে ৯৩ বছর পর ২০০৬ সালে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে কবির নামে বিশ্ববিদ্যালয়, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়। কবি নেই, কিন্তু বটগাছটি আজও কালের সাক্ষী হয়েই দাঁড়িয়ে আছে। বটবৃক্ষকে কেন্দ্র করে বিশ্ববিদ্যালয় হলেও বিশ্ববিদ্যালয় ভিতরে ঠাই হয়নি নজরুলের সৃতি বিজরিত সেই বটবৃক্ষের। বর্তমান সরকারের সামগ্রিক উন্নয়নের অংশ হিসেবে ১৫ বছরে পদার্পণ করা বিশ্ববিদ্যালয়টি পিছিয়ে না থাকলেও অনাদর অবহেলায় বিদ্রোহী কবি নজরুলের স্মৃতিধন্য বটগাছটি। বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়নের ছোয়ায় সেই বটবৃক্ষকে ছুড়ে ফেলে দিয়েছে সীমানা প্রচীরের বাহিরে। নজরুল প্রেমী ভক্তদের হ্রদয়ে রক্তক্ষরণ হলেও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সেচ্ছাচারিতায় এমন কর্মকান্ড হয়েছে বলে জানান স্থানীয়রা।
গত শতাব্দীর সত্তরের দশকে তৎকালীন ময়মনসিংহ জেলা ম্যাজিস্ট্রেট পি এ নাজির নজরুল স্মৃতিবিজড়িত বটগাছের গুরুত্ব অনুভব করে প্রথমবারের মতো বটগাছটি কেন্দ্র করে চারপাশে পাকা বেদি করেন। ত্রিশালের নজরুল স্মৃতিবিজড়িত সব স্থাপনার যথাযথ কর্তৃপক্ষ দ্বারা রক্ষণাবেক্ষণ করা হলেও বটগাছটি একেবারেই নিগৃহীত।
নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ে একের পর এক বহুতল ভবন নির্মাণ হচ্ছে কিন্তু কবির জন্মদিনে সাজ্জসজ্জিত করা হয় ক্যাম্পাস কিন্তু অবহেলায় বটবৃক্ষ।
নজরুল গবেষক এবং বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব নজরুল স্টাডিজের উপপরিচালক রাশেদুল আনাম জানান, কালের পরিক্রমায় বটগাছ ব্যতীত নজরুল স্মৃতিবিজড়িত সব জায়গার পরিবর্তন, পরিবর্ধন ও সংস্কার সাধিত হলেও একমাত্র জীবন্ত কিংবদন্তি হিসেবে ঠায় দাঁড়িয়ে আছে বটগাছটি। যেহেতু নজরুলের নামে বিশ্ববিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, সেহেতু বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের উচিত জমি অধিগ্রহণ করে যথাযথভাবে বটগাছটিকে সংরক্ষণ করা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন ও পরিকল্পনা বিভাগের পরিচালক ড. হাফিজুর রহমান বলেন, কিশোর নজরুল এই বটবৃক্ষের নিচে বাশি বাজাতেন। বটবৃক্ষকে কেন্দ্র করেই এখানে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় শুরুতে ১৫ একর জমি নিয়ে শুরু হলেও আমরা ধাপে ধাপে অধিগ্রহন করে ৫৭ একর জমি অধিগ্রহন করেছি। প্রথম দিকে আমরা জানতাম বটবৃক্ষের জমিটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তাই অধিগ্রহন জটিলতা ছিল। তবে সম্প্রতি আমরা জানতে পারি এই জমিটি মালিকানাধীন। নজরুলের সৃতিকে ধরে রাখতে বটবৃক্ষটি সংরক্ষন প্রয়োজন আমরা পরবর্তী পরিকল্পনায় এ বিষয়ে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহন করবো।
স্থানীয় ও নজরুল প্রেমীরা বলেন, যে বটগাছকে কেন্দ্র করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা সেনই বিশ্ববিদ্যালয়ে হাজার কোটি টাকার উন্নয়ন হলেও বটগাছটি সংরক্ষনে কোন উদ্যোগ নেয়া হয়নি। যা জাতীয় কবির সৃতিকে অবমাননার সমতুল্য। বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ১৫ বছর পর নিজস্ব সীমানা প্রাচীর নির্মানের নামে বটগাছটি বাহিরে রেখে সীমানা প্রাচীরের বাহিরে ছুড়ে ফেলে দেয়া হয়েছে। আমরা নজরুল প্রেমীরা এটা মেনে নিতে পারিনা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. সৌমিত্র শেখর বলেন, আমি কিছুদিন হলো এই বিশ্বদ্যিালয়ে যোগদান করেছি। এর আগে কখনো এব্যাপারে কোন পরিকল্পনা গ্রহন করা হয়নি বলে আমি জেনেছি। আমাদের জাতীয় কবির সৃতিতে ধরে রাখতে দ্রুত সময়ের মধ্যে নজরুল বটবৃক্ষকে বিশ্বদ্যিালয়ের আওতায় নিয়ে আসার ব্যাপারে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহন করবো।