ছবি : সংগৃহীত
মো ফাহাদ বিন সাঈদ, জাককানইবি সংবাদদাতা:
জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের খাবারের সমস্যা দীর্ঘদিনের তবে সাম্প্রতিক সময় ব্যাপক হারে বেড়েছে। এছাড়াও খাবার পানির সঙ্কটও অসহনীয় মাত্রায় বেড়েছে।
মানসম্মত খাবার অতিরিক্ত মূল্যে বিক্রি খাবারের সংকটে ভুগছে বিশ্ববিদ্যালয় ও আশেপাশে অবস্থান করা প্রায় চার হাজার শিক্ষার্থী।আর নতুন দুই আবাসিক হলে খাবার বন্ধ এই নিয়ে চরম বিপাকে শিক্ষার্থীরা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪টি হল ও একমাত্র ক্যাফেটেরিয়া ‘চক্রবাকে’ খাবার ও পানির সংকট, দাম ও মান নিয়ে বারবার বিভিন্ন দাবি-দাওয়া করা হলেও কোন কার্যকর ব্যাবস্থা নেওয়া হচ্ছে না বলে অভিযোগ শিক্ষার্থীদের।
সরেজমিনে দেখা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের অগ্নিবীনা হল, দোলনচাঁপা হল, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হল ও বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হল মিলিয়ে আবাসিক শিক্ষার্থী প্রায় আড়াই হাজার ।
এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের আশেপাশের মেসগুলোতে থাকে অনেক শিক্ষার্থী যারা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাফেটেরিয়া কিংবা হলের ডাইনিংয়ের খাবারের উপর নির্ভরশীল। বঙ্গবন্ধু ও বঙ্গমাতা হলে দীর্ঘদিন যাবত ডাইনিং বন্ধ থাকায় বঙ্গবন্ধু হলের প্রায় এক হাজার শিক্ষার্থী অগ্নিবীনা হলে ও বঙ্গমাতা হলেরও সমান সংখ্যক শিক্ষার্থী দোলনচাঁপা হলে খাবার খেতে যাচ্ছে। কেউ কেউ ক্যাফেটেরিয়াতেও খেতে যাচ্ছে। এতে খাবার পরিবেশন করতে হিমশিম খেতে হচ্ছে বলে জানান অগ্নিবীণা হল ও দোলনচাঁপা হলের ডাইনিং পরিচালকরা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের একমাত্র ক্যাফেটেরিয়াটি অত্যন্ত ছোট। এখানকার খাবারের দাম ও মান নিয়ে অভিযোগের শেষ নেই শিক্ষার্থীদের। সবসময় পাওয়া যায় না খাবার, পানি পাওয়া দুষ্কর হয়ে উঠেছে।
এর আগে অগ্নিবীনা ছাত্র হলের খাবার খেয়ে অসুস্থতার অভিযোগও করেছেন বেশকিছু শিক্ষার্থী। তদুপরি দিনদিন বেড়েই চলেছে খাবারের দাম, কমছে মান। জয় নন্দী নামে এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘অগ্নিবীণায় ভাতের প্লেট বেড়ে ৮ টাকা হল, পরিমাণ খুবই নগণ্য। দেড় প্লেট বলে তারা ভাত দেয়, কিন্তু দেখা যায় পরিপূর্ণ এক প্লেটও হয় না। মাছ আর মুরগির টুকরোর কথা না হয় বাদই দিলাম। স্বাদের কথা বললে এক কথায় বলতে হয় - কোনোমতে খেয়ে বেঁচে আছি।’
একারণে অনেক শিক্ষার্থী ক্যাম্পাসের বাইরের হোটেলগুলোতে চড়া দামে খাবার খেতে বাধ্য হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সাজ্জাদ হোসেন বলেন, ‘বাইরের হোটেলগুলোতে এত দামে স্বাদহীন খাবার খাই, সেটাও সবসময় পাওয়া যায় না। এক দোকান থেকে অন্য দোকানে ঘুরতে হয়। খাবার পেলেও সীট পেতে বেগ পেতে হয়।’
খাবারের সংকট নিয়ে বৃষ্টি পাঠান নামে এক শিক্ষার্থী বলেন,ডাইনিং গুলোতে বলে খাইলে খান না খাইলে চলে যান। তাদের লসের সীমা নাই৷ বাড়ি ঘর বেইচা উনারা আমাদের জন্য ডাইনিং চালান। ভাবের গরমে এখন ডাইনিং এ যাওয়াই বন্ধ করে দিছি। আর খাবার এর কথা বলে শেষ করা যাবেনা।
আরেক শিক্ষার্থী তরিকুল কবির বলেন, ‘বৃষ্টির দিনে বঙ্গবন্ধু হল থেকে সেকেন্ড গেইটে খেতে যেতে হয় তিন বেলা, শিক্ষার্থীদের খাওয়ার সুবিধাটুকুও দিতে পারছে না বিশ্ববিদ্যালয়। খুবই হতাশাজনক।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সৌহার্দ্য বলেন, দুর্নীতি কিভাবে হচ্ছে বা কই হচ্ছে তা হলের খাবারের দাম ও মান দেখে ২ বছরের শিশু ও বুঝে যাবে। প্রতিটি হল প্রভোস্ট স্যার/ ম্যাডাম দের নিয়মিত তিন বেলা হলের ডাইনিং এর খাবার খাওয়া বাধ্যতামূলক করলেই হলের খাবারের মানের উন্নয়ন হবে।
বঙ্গবন্ধু ও বঙ্গমাতা হলের শতকরা ৯০ ভাগ আবাসিক শিক্ষার্থী বলেন ‘খাবার পানি নিতেও বঙ্গবন্ধু হল থেকে অগ্নিবীণা হলে যেতে হয়। কারণ বঙ্গবন্ধু হলের পানির অবস্থা অত্যন্ত খারাপ। জগে রাখলে নিমিষেই জগ লাল হয়ে যায়। জানিনা পেটের ভিতরে কোন রঙ হয়েছে। অনেক ভয়ে থাকি৷ শরীরে চুলকানি দেখা দিয়েছে। হয়তো পানির জন্যই।’ এ ব্যাপারে কোন পদক্ষেপ নেয়া তো হয়ই নি, কোনও আশ্বাসও নেই প্রশাসনের। খাবার ও পানির সমস্যা এখন স্থায়ী রুপ নিচ্ছে নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ে।
হলে খাবারের মান ও দাম নিয়ে অগ্নিবীণা হল প্রভোস্ট কল্যানাংশু নাহা বলেন, ‘অগ্নিবীণা হলের আবাসিক শিক্ষার্থী ২৪০ জন, আবাসিক ছাত্রদের জন্যই খাবারের ব্যাবস্থা করা হয়। অথচ হলে প্রতিদিন খাবার খায় অন্তত দেড় থেকে দুই হাজার শিক্ষার্থী। এজন্যই নানা সংকটে পড়তে হচ্ছে।’
হলের ডাইনিং বন্ধ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে বঙ্গমাতা হলের প্রভোস্ট নুসরাত শারমিন তানিয়া বলেন, ‘আমরা ডাইনিং চালু করতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি, কোন কুলকিনারা পাচ্ছি না। বিশ্ববদ্যালয় প্রণোদনা বা ভর্তুকি না দিলে কেউ ডাইনিং নিতে চাচ্ছে না।’
বিশ্ববিদ্যালয় কেন ভর্তুকি বা প্রণোদনা দিচ্ছে না বা দিবে কি না- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি অর্থবছরের মাঝে হল চালু হওয়া, আগের বাজেটে বরাদ্দ না থাকা সংক্রান্ত জটিলতার কথা উল্লেখ করেন।
অগ্নিবীণা হল প্রভোস্ট অগ্নিবীণা হল প্রভোস্ট কল্যানাংশু নাহা খাবারের মান নিয়ে তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে অগ্রিবীণা হল ব্যতীত বাকি সব হলের ক্যান্টিন এখনো বন্ধ। অগ্নিবীণা হলে মোট আবাসিক শিক্ষার্থী প্রায় ২৪০ জন। হল ক্যান্টিনে শুধুমাত্র আবাসিক শিক্ষার্থীদের খাবারের ব্যবস্থা করা হলেও এখানে প্রতিদিন গড়ে ২০০০-২৫০০ জন শিক্ষার্থী খাবার খায়। খাবারের মান বাজে হলে এত বেশি শিক্ষার্থী খায় কেনো?
বঙ্গবন্ধু হল প্রভোস্ট মাসুম হাওলাদার বলেন, ‘তেমন যোগ্য কেউ হলগুলোর ডাইনিং চালানোর আগ্রহ প্রকাশ করছেন না। ঈদের আগে যে ডাইনিং চালিয়েছে সেও অপারগতা প্রকাশ করেছে৷ আমরা যোগ্য কাউকে খুঁজছি৷ আশা করছি শীঘ্রই চালু করতে পারবো।’
আর দোলনচাঁপা হল প্রভোস্ট সিরাজাম মুনিরাকে একাধিক ফোন দিয়েও পাওয়া যায়নি।