ছবি : সংগৃহীত
২০১৬ সালের পহেলা জুলাই রাতে গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারিতে জঙ্গি হামলায় প্রাণ হারান ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের সহকারি পুলিশ কমিশনার রবিউল করিম। বর্বরোচিত সেই হামলার আজ ছয় বছর। স্বজন হারানোর অর্ধযুগ পেরিয়ে কেমন আছে তার পরিবার? কীভাবেই বা কাটছে তাদের দিন?
দুই ভাইয়ের মধ্যে রবিউল করিমই ছিলেন বড়। ছোট ভাই শামসুজ্জামান শামস্ বর্তমানে একটি জাতীয় দৈনিকের সাভার প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করছেন। ভাইয়ের সঙ্গে কাটানো মুহূর্তগুলো এখনও যত্নে রেখেছেন স্মৃতির পাতায়৷ স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে বলছিলেন, ‘'বছরের প্রতিটা ঈদের আগে ভাইয়াকে ভীষণভাবে মনে পড়ে। ঈদের ঠিক আগে ভাইয়া বাড়ি আসার সময় আমাকে কল দিতেন। আর বলতেন "কী রে বাড়ি যাবি না?" প্রায় সময়ে আমরা একসঙ্গেই বাড়ি আসতাম।’ রবিউলের বাবা বেঁচে নেই। মা করিমুন্নেছা কাটিগ্রামের বাড়িতেই থাকেন।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩০তম আবর্তন ব্যাচের শিক্ষার্থী রবিউল করিমের মৃত্যুর পর তার স্ত্রী উম্মে সালমাকে প্রশাসনিক কর্মকর্তা পদে চাকরি দিয়ে ছায়াহীন পরিবারটির পাশে এসে দাঁড়িয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। সাভার থেকে স্বল্প দূরত্বে হওয়ায় দুই সন্তানকে নিয়ে থাকেন বাবার বাড়িতেই, ধামরাই উপজেলার দেশাপাই গ্রামে। মাঝে মাঝে দুই সন্তানকে নিয়ে যাওয়া পড়ে স্বামীর বাড়িতেও। স্বামীর শেষ স্মৃতি দুই সন্তানকে আঁকড়ে ধরেই বেঁচে আছেন উম্মে সালমা। তার ইচ্ছা, বাবার মতো তার সন্তানরাও আদর্শবান হয়ে গড়ে উঠবে। দেশ ও জাতির পাশে এসে দাঁড়াবে।
‘আমার স্বামী দেশের জন্য জীবন উৎসর্গ করেছেন, শহীদ হয়েছেন, সেটা গর্বের। সেই গর্বে তাকে হারানোর বেদনা আড়াল করার চেষ্টা করি। কয়জনের কপালে এমন সম্মান জোটে?' বলছিলেন শহীদপত্নী উম্মে সালমা।
এই পরিবার ছাড়াও আরও একটি পরিবার আছে রবিউলের৷ বিকনিং লাইট অর্গানাইজেশন অব ম্যানকাইন্ড অ্যান্ড সোসাইটি (ব্লুমস) নামে বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশুদের নিজ গ্রামে গড়েছিলেন একটি স্কুল। স্কুলটি এখনও আছে, শিক্ষার্থীসংখ্যা ৪৭ থেকে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬৯ এ। কিন্তু নেই তাদের অভিভাবক। রবিউলের গড়া স্কুলটি বর্তমানে রাজীব আহমেদই দেখভাল করেন। তিনি বলছিলেন, 'রিয়াদকে মাঝে মাঝে রবিউল ভাইয়ের ছবির সামনে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখি। একদৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে ছবির দিকে। তারপর কাউকে কিছু না বলে চুপচাপ এসে বসে থাকে৷’ রিয়াদ হোসেন স্কুলটিতে পড়ছেন সেই ২০১১ সাল থেকে৷ রবিউল করিমের সঙ্গে তার রয়েছে অনেক স্মৃতি। কিন্তু ২০১৭ সালের পর থেকে রবিউলের সঙ্গে আর দেখা হয়নি তার রিয়াদের।
রবিউলের ষষ্ঠ মৃত্যুবার্ষিকীতে আজ (শুক্রবার) বেলা সাড়ে দশটার দিকে কাট্টিগ্রাম ক্লাবের সামনে থেকে একটি শোক র্যালি বের করা হয়। র্যালিটি রবিউলের গড়া স্কুল প্রাঙ্গনে গিয়ে শেষ হলে সেখানে তার স্মরণে একটি আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। বিপিএটিসির পরিচালক যুগ্ম সচিব আব্দুল আলিম, মানিকগঞ্জের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ গোলাম আজাদ খান, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার হাফিজুর রহমান, রবিউলের স্ত্রীর উম্মে সালমাসহ রবিউলের ছেলেমেয়ে ও পরিবারের লোকজন এবং গ্রামবাসী সেখানে উপস্থিত ছিলেন।