• ১৯ জুলাই ২০২২ ১৮:৪৬:৩৭
  • ১৯ জুলাই ২০২২ ১৮:৪৬:৩৭
অন্যকে জানাতে পারেন: Facebook Twitter Google+ LinkedIn Save to Facebook প্রিন্ট করুন
বিজ্ঞাপন

না পড়া দ্বিতীয় লাইন ও আমাদের মসজিদের এসি

ছবি : কাকন রেজা

কাকন রেজা: 

আমরা শুধু আগের লাইনটা পড়ি পরেরটা কেন পড়ি না! ‘সংসার সুখের হয় রমণীর গুণে’, এইটুকুতেই আমরা শেষ, পরেরটুকু যে, ‘গুণবান পতি যদি থাকে তার সনে’, এইটুকু আর পড়ি না। আমরা ঋণখেলাপির তালিকায় নেই। কেন নেই, কারণ আমাদের উপর সব পরিশোধের দায় এখনো পড়েনি। কিন্তু পরের লাইনে রয়েছে ২০২৪-২৫ নাগাদ আমাদের অবস্থা খারাপ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তখন বিদেশী ঋণ পরিশোধের পুরো চাপটা সইতে হবে। কেন সইতে হবে, এর জবারে বলি, সব মেগা প্রকল্প এখনো শেষ হয়নি। 

প্রকল্প শেষ না হওয়া এবং চালু পর্যন্ত ঋণ পরিশোধের দায় থাকে না। চালু হবার পর সেই চাপটা শুরু হয়। আমাদের সব মেগা প্রকল্প যখন শেষ হবে, তখন চাপটা সঙ্গতই বেড়ে যাবে। সেই চাপ কুলানোর ক্ষমতা আমাদের কতটুকু সেটা হিসেব করে দেখতে পারেন। আমাদের রিজার্ভে এই অবস্থাতেই টান পড়েছে। মাত্র চার থেকে পাঁচ মাসের আমদানি ব্যয়ের সমপরিমান রিজার্ভ রয়েছে বলে বলা হচ্ছে। হিসেব করার সময় এই ব্যাপারটাকেও মাথায় রাখতে পারেন, তাহলে মেলাতে সুবিধা হবে। 

পরিকল্পনা যখন পরীদের কল্পনা হয় তার শেষ পরিণতি হলো পরী উড়ে যাওয়া এবং শুধু কল্পনা পড়ে থাকা। আমাদের সরকারি ভাবে বিদ্যুৎ প্রকল্পের ব্যবস্থা না করে কুইক রেন্টাল পদ্ধতি বেছে নেয়া হয়েছে। কুইক রেন্টাল হলো বিপর্যস্ত একটা পরিস্থিতি থেকে উন্নতির প্রাথমিক প্রয়াস। তাই তার সাথে ‘কুইক’ শব্দটি যুক্ত হয়েছে। ‘কুইক রেমিডি’ বলতে পারেন। এই বিদ্যুতকেন্দ্রগুলো তেলে পরিচালিত। গ্যাসের চেয়ে তেল দিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদনের খরচ অনেকগুণ বেশি। বলা হয়েছে, পরিস্থিতির দ্রুত মোকাবেলায় কুইক রেন্টাল পদ্ধতি গ্রহণ করা হয়েছে। কিন্তু পরিস্থিতি মোকাবেলার পর এত বছরেও সরকারি খাতে বিদ্যুৎ উৎপাদনের আশানুরূপ কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। নিজেদের গ্যাসক্ষেত্রগুলি থেকে গ্যাস উত্তোলনেরও তেমন কোনো কর্মযজ্ঞ দেখা যায়নি। যেমন দেখা গেছে অপ্রয়োজনীয় কাজগুলির ক্ষেত্রে। তারমধ্যে আতশবাজি কেনাও রয়েছে। আমাদের বিদ্যুতের অবস্থা এখন সেই আতশবাজির মতন। জ্বলে উঠে নিভে যাওয়ার অবস্থা। 

বিদ্যুতের উৎপাদন আমাদের প্রয়োজনের দ্বিগুন হয়েছে, এমন কথা আমরা শুনে এসেছি। যারা ভেতরের ব্যাপারগুলো না বোঝেন তারা আশ্বস্ত হয়েছেন। বলেছেন, যাক বাবা বাঁচা গেলো। কতটা বেঁচেছেন এখন হয়তো কিছুটা বুঝতে পারবেন। যে ব্যবস্থা সাময়িক, বিপর্যয় সামলানোর জন্য, যার ফলেই তার খরচ বেশি। এটা আমরা মেনে নিয়েছিলাম। অবশ্য সবই আমরা মেনে নেই। এই যে লোডশেডিং তাও আমরা মেনে নেব। কিন্তু মুশকিল হলো সেই বেশি খরচ দিয়ে আনা রেসকিউ টিমকে আমরা সাময়িকের জায়গায় স্থায়ী করে ফেললাম। অবস্থা এমন দাঁড়ালো তাদের কাছ থেকে বিদ্যুৎ না কিনেও বছরে হাজার কোটি টাকা গচ্চা দিতে হলো এবং হচ্ছে। ক্যাপাসিটি চার্জের নামে সেই টাকাটা যাচ্ছে আমাদের পকেট থেকেই। আমাদের পকেট কেটে আমাদেরকেই গর্ব ভরে বলা হয়েছো, দেখ দিলাম। আজব না? 

অপচয় বন্ধে নামাজের সময় ছাড়া মসজিদের এসি বন্ধ  করবার আদেশ দেয়া হয়েছে। এটা নতুন কোনো কথা নয়। মসজিদ অফিস বা বসতঘর নয় যে এসি সবসময়ই চালু রাখতে হবে। নামাজের সময়ই এসি চালু থাকে। পুরানো কথা যখন নতুন করে আলাপে উঠে আসে, সেই উঠে আসার পেছনে একটা নিশ্চিত উদ্দেশ্য থাকে। খেয়াল করুন, মসজিদের এসি বিষয়ক আলাপ এখন সামাজিকমাধ্যম জুড়ে, ন্যুব্জ গণমাধ্যমও পিছিয়ে নেই। মসজিদের এসি বিষয়ক আলাপের নিচে চাপা পড়ে গেছে কুইক রেন্টালের নামে হাজার হাজার কোটি টাকা গচ্চার বিষয়টি। পরিবেশ বিষয়ক অধিদপ্তর রয়েছে দেশে, সেটা এতোটাই পরিবেশ বান্ধব যে, সে অধিদপ্তরে যত টন এসি চলে, তা পরিবেশ কেন, আমাদের নড়বড়ে বিদ্যুৎ ব্যবস্থার বেহালের জন্য কিছুটা হলেও দায়ী। এমন প্রতিটা অধিদপ্তরের এসির হিসাব করলে তো হাতে হারিকেন উঠবে। সুতরাং মসজিদের এসি বন্ধের বিষয়ে আলাপটি মূলত তর্ক সৃষ্টির খাতিরেই সৃষ্ট। সুতরাং এ নিয়ে তর্ক না করে, আসল বিষয়ে নজর দিন, কাজে দেবে। নামাজ আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য, আপনার শারীরিক সন্তুষ্টির জন্য নয়। 
কাকন রেজা : লেখক ও সাংবাদিক। 

সংশ্লিষ্ট বিষয়

মসজিদ এসি

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
Page rendered in: 0.1569 seconds.