• ০৩ আগস্ট ২০২২ ১৬:২৩:২১
  • ০৩ আগস্ট ২০২২ ১৬:২৩:২১
অন্যকে জানাতে পারেন: Facebook Twitter Google+ LinkedIn Save to Facebook প্রিন্ট করুন
বিজ্ঞাপন

হাউসফুল সিনেমা হল ও আমাদের যাপিত বাস্তবতা এবং গালগল্প

ছবি : কাকন রেজা

কাকন রেজা :

সিনেমা নিয়ে দারুণ কথা চলছে এখন সামাজিক ও গণমাধ্যমে। হাউসফুল গল্প সবখানে। এই প্রচারণার ফলও ফলতে শুরু করেছে। আমার এক অনুজ সামাজিকমাধ্যমে লিখলেন, ‘সিনেমা হলে টিকিট পাওয়া যাচ্ছে না, তারপরেও কেউ কেউ বলে দেশ শ্রীলঙ্কা হয়ে যাচ্ছে!’। মূলত সাধারণ ধারণা এমনটাই। যে অনুজটির কথা লিখছি, তার চিন্তাশক্তি এভারেজ নয়। কিন্ত তারপরেও তিনি এভারেজ একটা কথা লিখলেন।

‘সঙ্গদোষে লোহা ভাসে’ অবস্থা। কারণ, তিনি যে দর্শন বা চিন্তা ধারণ করেন তা এখন ‘লোহা ভাসা’র ধারাতেই টিউনড। এই ধারাটি তর্ক করতে পছন্দ করে বিতর্ক নয়। তর্ক আর বিতর্কের পার্থক্য হলো, তর্কে যুক্তি থাকে না, শুধু উদাহরণ থাকে, সেটা প্রায়োগিক না হলেও। কিন্তু বিতর্ক যুক্তিবদ্ধ।

এই যে, হলের টিকিট না পাওয়াটাকে আমাদের সার্বিক সামাজিক অবস্থা যে ভালো তার নিদর্শন স্বরূপ উপস্থাপনের চেষ্টা, এটা হলো তর্ক। অথচ যারা বলেন তারা যদি গণমাধ্যমে ভালো ভাবে ‍দৃষ্টি দিতেন তাহলে দেখতে পেতেন, শ্রীলঙ্কাতে দেহব্যবসা বৃদ্ধি পেয়েছে আগের তুলনায় ত্রিশ ভাগ। যৌনতা একধরণের বিলাসিতা। সিনেমা দেখার বিলাসিতার চেয়েও বেশি কিছু। তাহলে কি শ্রীলঙ্কাতে কোনো অভাব অভিযোগ নেই? শ্রীলঙ্কার অর্থনীতি কি ক্র্যাশ করেনি? কিছুদিন আগেই রাশিয়ার দুরাবস্থায় দেহব্যবসা বৃদ্ধি পেয়েছিলো, একটা রুটির বিনিময়েও দেহ বিলিয়েছে সেখানের মেয়েরা। সুতরাং সিনেমা হাউস ফুল বা দেহ ব্যবসা এগুলো কখনো বরং অবনতির সূচক। হাউসফুল বিষয়ক যে অযথা তর্ক করার প্রবণতা, বিপর্যয়কে ঢেকে রাখার অযৌক্তিক বাসনা, তা আজকে আমাদের দেশকে এ পর্যায়ে এনেছে।

মাছরাঙা টেলিভিশন একটি প্রতিবেদন করেছে দেশের চলমান মেগাপ্রকল্পগুলো নিয়ে। টাকার অঙ্ক দেখলে মাথা ঘুরে যায়। কথায় রয়েছে, ‘সময়ের এক ফোঁড়, অসময়ের দশ ফোঁড়’। হিসেব অনুযায়ী দেশে পাঁচ মাসের মতন আমদানী ব্যয় মেটানোর টাকা রয়েছে। এমন একটা দেশের একসাথে এতগুলো মেগাপ্রকল্প নেয়ার যৌক্তিকতা কতটুকু, তা ভেবে দেখাটাই দূরদর্শিতা। ‘মারলে ছক্কা, না মারলে অক্কা’, এমন চিন্তা বাজিকরদের। বিশেষ করে যারা ক্রিকেট জুয়ায় অভ্যস্ত তাদের। অবশ্য আমাদের দেশেও অনেকে ক্রিকেট জুয়ায় অভ্যস্ত হয়ে উঠেছে। মাঝেমধ্যে পুলিশের হাতে ধরাও খায় তারা। কিন্তু বড় জুয়ারিরা সব-সময় আড়ালেই থেকে যায়।

আইএমএফ, বিশ্বব্যাংকসহ উন্নয়ন অংশীদারদের কাছ থেকে ঋণ চাওয়া হচ্ছে। অতিরিক্ত সবই খারাপ। এই যে একসাথে এত মেগাপ্রকল্প তা ব্যাকফায়ার করতে শুরু করেছে। যার প্রভাবটা বোঝা যাবে ২০২৪ এর পর থেকে। আর এই যে ‘বেইলআউট’ প্রার্থণা তাও কোনো সুসময়ের নিদর্শন নয়। অন্ধ হলেও প্রলয় বন্ধ থাকে না, অতি প্রচলিত কথা। না-না ক্ষেত্রে এ প্রবচন উদ্ধৃত হয়। মুশকিল হলো উদ্ধৃত হলেও চর্চা হয় না। বরং চর্চা হয় উল্টোটার। ঢেকে রাখার চেষ্টা করা হয়। দশটা বড় ডিজেল চালিত বিদ্যুতকেন্দ্র বন্ধ, তবু তেল বাঁচানোর অজুহাতে লোডশেডিং হলো, এ কথাটা ঢেকে রাখা হয়। ডলারের সংকটকে আড়ালে রাখার চেষ্টা চলে। গ্রেস পিরিয়ড শেষ হলে ঋণের কিস্তি পরিশোধের চাপ আসবে ২০২৪ থেকেই, এ কথা এড়িয়ে যাওয়া হয়। এমন সব বিষয়গুলোকে ঢেকে দেয়ার চেষ্টা হয় হিরো আলমে কিংবা সিনেমা হলের হাউসফুল গল্পে। যা স্রেফ গালপল্প। আর আমাদের একটা অংশ এই গালগল্পই ভালোবাসে হয়তো বিশ্বাসও করে। এই অন্ধ বিশ্বাসের অপর নাম হলো ‘ডগমাটিজম’।

কাকন রেজা : লেখক ও সাংবাদিক।

সংশ্লিষ্ট বিষয়

হাউসফুল সিনেমা

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
Page rendered in: 0.1457 seconds.