• ০৫ সেপ্টেম্বর ২০২২ ১৩:৪৯:২৯
  • ০৫ সেপ্টেম্বর ২০২২ ১৩:৪৯:২৯
অন্যকে জানাতে পারেন: Facebook Twitter Google+ LinkedIn Save to Facebook প্রিন্ট করুন
বিজ্ঞাপন

গুলির কোনো পক্ষ নেই, শত্রু-মিত্র নেই

ছবি : সংগৃহীত

কাকন রেজা :

আমি সাধারণত দলীয় রাজনীতি কিংবা রাজনৈতিক কর্মসূচি নিয়ে খুব একটা কথা বলি না। এসব ব্যাপারে কথা বলার অনেকজন রয়েছেন। সুতরাং ভীড় বৃদ্ধির কোনো মানে নেই। তবে পয়লা সেপ্টেম্বর নারায়ণগঞ্জে শাওনের মৃত্যু নিয়ে রাজনীতির বাইরেও একটা কথা থেকে যায়, তা দিয়েই শুরু করছি। পুলিশের গুলিতে শাওন মারা গেছেন। শাওন বিএনপির সমর্থক ছিলেন, মিছিলে ছিলেন। মিছিলের প্রথম সারিতে তার সরব উপস্থিতিই সে প্রমাণ। বিপরীতে আরেকটা সত্য হলো নিহত শাওনের ভাইয়ের বয়ান। তিনি বলেছেন, তার পরিবারের লোকজন আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে জড়িত। শাওনের এক জ্ঞাতি চাচা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতা। 

কথাটা এই জায়গাতেই। রাজনীতি বাদ দিই। গুলিতে কে মারা গেছে, একজনের ভাই, আরেকজনের ভাতিজা। সেই ভাই, চাচা যারা আওয়ামী লীগ করেন। যিনি মারা গেছেন তিনি বিএনপি করতেন বা সমর্থক ছিলেন। তাহলে তো নিশ্চয়ই বলা যায়, গুলিটা নিরপেক্ষ ছিলো। মূলত গুলির কোনো পক্ষ নেই, শত্রু-মিত্র নেই, এই সত্য বুঝতে পারাটাই সবচেয়ে বড় রাজনীতি। 

বাংলাদেশের পুরো চিত্রটাই এই। ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সভাপতির বাবা আওয়ামী লীগ থেকে উপজেলা চেয়ারম্যান হয়েছেন। তাদের পরিবার আওয়ামী লীগের। বিএনপির এক নেতার বোন আওয়ামী লীগের ঘোর সমর্থক। পুলিশের কাউকে কাউকে চিনি, যিনি পুলিশ হবার আগে রাজনৈতিক আদর্শে ছিলেন ঘোর আওয়ামী লীগার, কিন্তু তার নিজ বা জ্ঞাতিদের কেউ ঘোর বিএনপি। সুতরাং কথা সেই, গুলি হলো নিরপেক্ষ। আপনি করবেন, তা লাগবে আপনার জ্ঞাতি কারো গায়েই। ছোট এই দেশটার সবাই সবার সাথে কোনো না কোনো ভাবে যুক্ত। নিজস্বতার এই সমীকরণের বাইরে যারা, তারা একধরণের জাদুবাস্তবতায় বাস করেন। ওহ, আরেকটা কথা, শাওন বুকে গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। ভোলায় যারা মারা গেছেন, তাদের গুলি লেগেছিলো মাথায়। আত্মরক্ষা বা কথিত মব নিয়ন্ত্রণের গুলি সাধারণত এই উচ্চতায় হয় না। কথাটা মাথায় রাখলে নিজের ভাই বা আত্মীয়ই বেঁচে যেতে পারেন। যারা নিয়ন্ত্রণের কথা বলেন, তাদের এটা অবশ্যই মাথায় রাখা উচিত। 

আরেকটা বিষয়ে বলি। বিএনপির’র কর্মী নিহত হবার প্রতিবাদ করতে গিয়ে একজন লিখলেন বিএনপি দল হিসেবে গণদুশমন হলেও এই মৃত্যুর প্রতিবাদ করা উচিত। একজন বামপন্থীর পোস্ট এটা। বামপন্থীদের একটা নিজস্ব অবস্থান রয়েছে, যাকে তারা বলেন আদর্শিক। অতীতে দেখেছি সাধারণ পোশাকে, পাঞ্জাবি-পাজামা ও চটি অনেকটা ইউনিফর্ম হয়ে দাঁড়িয়েছিলো তখনকার বামপন্থীদের। মানুষ দেখলেই চিনতো। তাদের একটা চারিত্রিক দিক ছিলো, তারা অধিকাংশ যাপিতজীবনে সৎ ছিলেন। তাদের চিন্তার সাথে একমত না হলেও মানুষ তাদের শ্রদ্ধা করতো। এখন সেই সাধারণ আবরণে অসাধারণ বাম খুঁজে পাওয়া কঠিন। 

যাকগে গণদুশমন বিষয়ে আসি। ধর্মের সংস্কার হয়েছে। সতিদাহ প্রথা উঠে গেছে। বিধবা বিয়ে হচ্ছে। তালেবানরাও হালে বলছে, কোরআন নারীদের পড়াশোনা ও কাজ করার অধিকার দিলে তারা না করবার কে। অথচ লাল বইয়ের কালো অক্ষরের ও চিন্তার কোনো সংস্কার হয়নি। তারা সময়ের সাথে নিজেদের মেলাতে পারেননি। সেই পুরানো সংজ্ঞা আর চিন্তাতেই তারা বুঁদ হয়ে আছেন। তারা কি চান না, শ্রমিকদের যাপিত জীবনের মান বাড়ুক। তাদেরও বাড়ি হোক, বাড়িতে এসি থাকুক, গাড়ি থাকুক। শ্রমিকদের সন্তানরাও ভালো স্কুলে পড়ুক। সম্ভবত তারা চান না। তাদের ওই এক চিন্তা। মেহনতি মানুষ মানেই, সারাদিন পরিশ্রম করবে, তার বিনিময়ে তিনবেলা খাবারের নিশ্চয়তা থাকবে। কুড়েঘর জাতীয় কথিত শান্তির নীড় থাকবে। বড়রা সন্ধ্যার পর একটু হারোমনিয়াম নিয়ে বসবে, কবিতা পড়বে। বাচ্চারা টুকটাক পড়াশোনা করবে পাশের স্কুলে। তারপর তারাও শ্রমিক হয়ে উঠবে। কেউ কেউ সেলাই দিদিমনি। তাদের হাসপাতালে মিনিমাম একটা চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হবে। মাঝেমধ্যে মজুরি বাড়ানোর আন্দোলন হবে। মালিকরা মজুরি বাড়িয়ে তাদের নেতৃত্বকে স্বীকৃতি দেবেন। কিন্ত শ্রমিকদের ধণিক শ্রেণির মালিক হওয়া যাবে না। তাদের গাড়ি থাকতে পারবে না, তাদের বাড়ি থাকতে পারবে না। তাদের দামি কাপড় পরার অধিকার থাকবে না। তা হলেই তারা শ্রেণি শত্রু, গণদুশমনে পরিণত হবে। এটাই কথিত বামপন্থার সহজ হিসেব। জটিল যে হিসেবে আছে তা বোঝেন বড় বড় নেতা ও তাত্ত্বিকরা। তা ছোটদের বোঝা নিষেধ। প্রাচীনকালের বেদ আর ব্রাহ্মণের সম্পর্কের মতন। শূদ্ররা যা পড়ার ও জানার অধিকার রাখে না। 

ফিরি গণদুশনের কথায়। একটা চিন্তাকে গণদুশমনের চিন্তা, সেই চিন্তার ধারকদের গণদুশমন আখ্যা দিলে, একটা হত্যাকাণ্ডের বিরোধীতাতেও প্রচ্ছন্ন সমর্থন থাকে। সেই সমর্থন বরং বন্দুককে উৎসাহী করে তোলে। মানুষ ট্রিগারহ্যাপি হয়ে ওঠে। রাজনৈতিক ভাবে সমর্থন বা বিরোধীতা এবং প্রতিবাদ যাই করুন না কেন, মন খুলে করুন। দো-দিল বান্দা হওয়ার কোনো রাজনৈতিক মানে নেই। 

কাকন রেজা : লেখক ও সাংবাদিক।

সংশ্লিষ্ট বিষয়

গুলি

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
Page rendered in: 0.1387 seconds.