• ২২ ডিসেম্বর ২০২২ ১৪:৫৬:৪০
  • ২২ ডিসেম্বর ২০২২ ১৪:৫৬:৪০
অন্যকে জানাতে পারেন: Facebook Twitter Google+ LinkedIn Save to Facebook প্রিন্ট করুন
বিজ্ঞাপন

ফিফা র‌্যাংকিং ও আমাদের রাজনীতির পাঠ

ছবি : সংগৃহীত

কাকন রেজা :

ফিফা র‌্যাংকিংয়ের সাথে রাজনীতির অনেক মিল রয়েছে। যেমন, আর্জেন্টিনা বিশ্বকাপ, কোপাসহ দুই বছরে তিনটি শিরোপা জিতেছে, কিন্তু দল হিসেবে ফিফার র‌্যাংকিংয়ে শীর্ষে যেতে পারেনি। বিশ্বকাপ পরবর্তী র‌্যাংকিংয়েও শীর্ষে ব্রাজিল। শুধু জিতলেই চলে না, জেতার সাথে আরো কিছু প্রয়োজন হয়। রাজনীতিও তাই জেতাটাই সকল কিছু নয়, প্রতিযোগিতাটাকে অর্থবহ করার মধ্যেই আসল বিজয়। রাজনীতির র‌্যাংকিংটাও সে অনুযায়ী হয়।  

বাংলাদেশের কথাই ধরি। সংসদে বিরোধীদল হলো জাতীয় পার্টি। বিরোধী দলের কাজ সরকারের ভুলটাকে সামনে আনা। কিন্তু সে কাজটা করার ক্ষেত্রে সফল হতে পারেনি তারা। তাদের কেউ কেউ তা স্বীকারও করেছেন। সাথে বিগত নির্বাচনের ভোট নিয়েও কথা বলেছেন। স্বীকার করেছেন সেই ভোটে যে কাণ্ড হয়েছে সেই কাণ্ডের কাণ্ডারিদের মধ্যে তারাও রয়েছেন। সবচেয়ে বড় কথা বিরোধীদলের নেতৃত্বের দ্বন্দ্ব মেটাতে যখন শাসক দলের হস্তক্ষেপ করতে হয়, তখন বিরোধী সত্তাটা সঙ্গতই প্রশ্নের সম্মুখিন হয়।

সারাবিশ্বের তাবৎ গণমাধ্যম সে কারণেই ‘অপোজিশন’ বলতে বিএনপির কথাই লিখে এবং বলে। গত দশ ডিসেম্বর ঘিরে বিশ্বের প্রধান গণমাধ্যমগুলো বাংলাদেশের রাজনীতি বিষয়ে গুরুত্ব সহকারে খবর করেছ। সে খবরগুলোতে ‘অপোজিশন’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে বিএনপিকেই। দেশের মাধ্যমগুলো এই বিরোধী অবস্থানকে মাঠ এবং সংসদ দু’ভাগে বিভক্ত করে ফেলেছে। বিএনপিকে বলছে মাঠের বিরোধীদল এবং জাতীয় পার্টিকে সংসদের। অবস্থা ওই ফিফা র‌্যাংকিংয়ের মতন। জিতলেও শীর্ষে থাকা সম্ভব হচ্ছে না।

অনেকে বলবেন, ফিফা র‌্যাংকিংয়ের সাথে আমাদের দেশের রাজনীতির ব্যাপারটা যায় না। জানি, শুদ্ধতার প্রশ্নে না যাওয়ার বিষয়টি ঠিক। শুধু রাজনীতি নয় অনেক কিছুই তো শুদ্ধ তথা স্বাভাবিক প্রক্রিয়ার সাথে আমাদের যায় না। এই যে, ব্যাংকগুলোতে ঋণ প্রদানের অবস্থা দেখুন, মাত্র চব্বিশ বছরের একজন নয়’শ কোটি টাকা ঋণ পায়। এটা কোনো ভাবেই স্বাভাবিক প্রক্রিয়ার সাথে যাওয়ার কথা নয়, তবু গেছে। যার ফলেই কেউ কেউ সামাজিকমাধ্যমে লিখেন, ‘আর্জেন্টিনা স্কোয়াড বিশ্বকাপ জিতে পেয়েছে চার’শ চল্লিশ কোটি আর একজন চব্বিশ বছর বয়সেই ব্যাংক থেকে নিয়ে নিয়েছে নয়’শ কোটি!’ এটা শুদ্ধ ও স্বাভাবিকতার বিরুদ্ধ ব্যাপার বলেই ট্রলের মাধ্যমে ক্ষোভ প্রকাশের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।

ব্যাংক ঋণ নিয়ে অনেক কথা হচ্ছে। ব্যাংকগুলোকে মূলধন দেয়ার কথাও গণমাধ্যম জানিয়েছে। চরম সংকটে না থাকলে কোনো ব্যাংকই কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে মূলধন সহায়তা চায় না। বিপর্যয় এড়াতেই তা চাওয়া হয়। এই ব্যাংক নিয়ে অনেকদিন ধরেই কথা হচ্ছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে টাকা চুরির ব্যাপারটা তো সমস্ত বিশ্বেরই জানা। না জানার কথাও নয়, এমন ঘটনা বিশ্বে খুব একটা নেই। অথচ সেই রিজার্ভের টাকার চুরির ব্যাপারটা এখন প্রায় অফটপিক। ডেইলি স্টার বাংলা’র ১৬ নভেম্বরের খবর অনুযায়ী এই চুরির তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়ার তারিখ ৬৮ বারের মতন পেছানো হয়েছে। এ নিয়ে খবর এই পর্যন্তই। বললাম না, বিষয়টি অফটপিকে পরিণত হয়েছে। এখন মোটামুটি অনটপিক ইসলামি ব্যাংকসহ কয়েকটি ব্যাংকের ঋণ প্রদানের বিষয়। একটি গ্রুপই যে পরিমান ঋণ নিয়েছে, তা অকল্পনীয় এবং স্বাভাবিক প্রক্রিয়ার সাথে কোনো ভাবেই যায় না। এই ঋণ প্রক্রিয়ার অনেকগুলো ঘটনাই স্বাভাবিক প্রক্রিয়ার সাথে সাংঘর্ষিক। যেমন, মাত্র দশ থেকে পঁচিশ হাজার টাকা ঋণের জন্য যখন কৃষকরা জেলে যায়, মামলা চলে। বিপরীত চিত্রে হাজার কোটি টাকা ঋণের বড় অঙ্কের সুদ মওকুফ করা হয়। কিস্তি প্রদান করা হয় সহজে পরিশোধের জন্য। ফলে রাঘব-বোয়ালদের জেলে যেতে হয় না। যত জ্বালা চুনোপুটিদের।

অবশ্য ঋণের বিষয়টিও এখন প্রায় অফটপিকে পরিণত হয়েছে। এখন চলছে বিশ্বকাপ ক্রেজ। সাথে ইউটিউবার সালমান মুক্তাদিরের কথিত নারী কেলেংকারি, অপু-বুবলি বাহাস ধরণের আইটেম। এগুলোই অনটপিক হয়ে উঠছে। বিশেষ করে একজন ইউটিউবারের পরকীয়া যে কতটা গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে তা আমাদের গণমাধ্যম প্রমাণ করেছে। অবশ্য আমাদের কতিপয় গণমাধ্যমের কাছে মানুষের রাজনৈতিক আর অর্থনৈতিক সমস্যার চেয়ে ইউটিউবার বা কথিত মোটিভেশনাল স্পিকাররাও অনেক ক্ষেত্রে অনটপিক হয়ে ওঠে। অফটপিক হয়ে যায় মানুষের দুঃখ-দুর্দশার আলাপ। বলতে পারেন, আমাদের গণমাধ্যমের র‌্যাংকিংয়ের কথাও। আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম সূচকে আমাদের গণমাধ্যমের অবস্থান দেখে বলতেই পারেন, ‘ইয়ে তো হোনাই থা’।

যাকগে, ফিফা র‌্যাংকিংয়ের কথাতে ফিরি। জয়টাই সব কথা নয়। এক নম্বরে বিজিত হয়েও থাকা যায়। আমাদের রাজনীতিও সেই কথাই জানান দেয়। রাজনীতি মূলত মাঠে। বিরোধীদল মাঠেই হতে হয়। পাঠের বিরোধীদল কাজির কাগুজে গরুর মতন, কেতাবে আছে গোয়ালে নেই। আমাদের পাঠের অনেক বিরোধীদল রয়েছে, তাদের নেতারাও অনেক জ্ঞানী মানুষ। প্রচুর বই পড়েছেন। কিন্তু তাদের মাঠের ব্যর্থতা প্রকট এবং তা দৃশ্যমান। বিজিত হয়েও যে শীর্ষে থাকা যায়, তা মাঠ থেকেই শিখতে হয়। যা আমাদের অনেকে শিখতে ব্যর্থ হয়েছেন। তাদের সেই ব্যর্থতাই মূলত আমাদের সকল দুর্দশার কারণ।

কাকন রেজা : সাংবাদিক ও লেখক।

সংশ্লিষ্ট বিষয়

ফিফা

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
Page rendered in: 0.1549 seconds.