• ১৮ জানুয়ারি ২০২৩ ১৪:১৭:১৯
  • ১৮ জানুয়ারি ২০২৩ ১৪:১৭:১৯
অন্যকে জানাতে পারেন: Facebook Twitter Google+ LinkedIn Save to Facebook প্রিন্ট করুন
বিজ্ঞাপন

বই ও বই বিক্রেতা, বইমেলার স্টল এবং শুদ্ধ ইতিহাস

ছবি : কাকন রেজা

কাকন রেজা :

বই নিয়ে কী চলছে বলুন তো! বইমেলায় স্টল বরাদ্দ নিয়ে কথা উঠেছে। ভিন্নমতের বই প্রকাশের জন্য আদর্শসহ অন্তত আরো একটি প্রকাশনী তাদের স্টল বরাদ্দ না পাবার কথা বলেছে প্রকাশ্যে। কেউ কেউ হয়তো অপ্রকাশ্যে বলেছে। একজন বই বিক্রেতা নিখোঁজ হয়েছেন। আমি যখন লিখছি তখন নিখোঁজের পঞ্চম দিন। মোল্লা জাফর নামে পরিচিত যিনি। স্রেফ একজন ব্যবসায়ী। যিনি বই বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করেন। জানামতে তিনি এমন কোনো বড় লেখক বা এক্টিভিস্ট নন। বই বিক্রি যতদূর জানি এখনো অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হয়নি। অন্তত লিখিত আদেশে নয়। অলিখিত কিছু থাকলে সেটা আমাদের মতন আমজনতার জানার কথা না। অবশ্য বইও অনেক সময় কারো বিপদের কারণ হতে পারে। বই মানুষের চোখ খুলে দেয়। চিন্তার অন্ধত্ব দূর করে। সেক্ষেত্রে অনেক কিছুই লুকিয়ে রাখা বা করা সম্ভব হয় না। 

ইতিহাস পাঠের কথাই বলুন। বই পড়েই এ ভূখণ্ডের রাজনৈতিক ইতিহাস জানা মানুষের পক্ষে সম্ভব। বই সহজলভ্য হয়ে গেলে এই যে পাঠ্য বইয়ে ভুলভাল কথা ঢুকিয়ে দেয়া হচ্ছে, তা যে সঠিক নয় তা মানুষ জানতে পারে। মানুষ জানতে পারে পাঠ্যবইয়ে ছাপানো নালন্দা ধ্বংসের ইতিহাস ভুল। সেটা বখতিয়ার খিলজি করেননি, করেছেন খোদ সেন রাজারাই। আমাদের স্বাধীন রাষ্ট্রের উদ্ভবের সঠিক ইতিহাসও জানতে পারে নতুন প্রজন্ম বই থেকেই। অনেকের চাপাবাজি ফিকে হয়ে যায় বইয়ের কালো অক্ষরের শক্তিতে। কী কারণে আমরা স্বাধীনতা চেয়েছিলাম, কেন নির্বাচনে জিতেও ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব হয়নি, এসব সবই জানা সম্ভব হয় তরুণ প্রজন্মের। আর এটা জানলে চাপিয়ে দেয়া সকল ইতিহাসই বাতিল হয়ে যায়। এসব কারণেও বই কারো কারো কাছে অস্ত্রের চেয়েও বিধ্বংসী হয়ে ওঠে। এরই প্রেক্ষিতে বই বিক্রেতাও কারো অপছন্দের কারণ হতে পারেন। ভিন্নমতের বই হলে তো কথাই নেই। সেই প্রকাশনীর স্টল বরাদ্দ না পাওয়াটাই স্বাভাবিক। 

জানি না, বই বিক্রেতা নিখোঁজ হবার কারণ। জাহেরি অবস্থায় তার কোনো দোষ মানুষের লেখায় ও কথায় জানতে পারিনি। অনেকেই সামাজিকমাধ্যমে তার খোঁজ চেয়ে পোস্ট দিয়েছেন। যারা দিয়েছেন তাদেরও জাহেরের দিকটা জানা ছাড়া, বাতেনের মানো গুপ্ত দিকটা জানা সম্ভব নয়। জানার কৌশল ও প্রক্রিয়া তাদের নেই। তাদের অনেকেই বুদ্ধিবৃত্তির চর্চার সাথে যুক্ত থাকলেও সামর্থ্যের সাথে যুক্ত নন। সামর্থ্যের সাথে ক্ষমতা সম্পূরক বলেই তাদের পক্ষে অজানা রয়ে যায় এমন নিখোঁজের কারণগুলো। যাদের সামর্থ্য রয়েছে তারা জানান এর কারণ এবং তাই সবাইকে মেনে নিতে হয়। যেহেতু বিকল্প আর কোনো উপায় নেই। 

খবরের ক্ষেত্রে ফ্যাক্টচেকের একটা ব্যাপার রয়েছে। কোন খবরটা সত্যি, কোনটা মিথ্যা তা একটু চেষ্টা করলেই জানা সম্ভব। ইতিহাসের অনেক ক্ষেত্রেই বইয়ের বিকল্প নেই। সে যা কিছুর ইতিহাসই হোক না কেন। সুতরাং বই কিংবা বই বিক্রেতা কারো জন্য ফ্যাক্টর হয়ে উঠতেই পারে। সত্যজিত রায় তার হিরক রাজার দেশে পড়াশোনার গুরুত্বের বিষয়টি সে কারণেই মানুষের বোধে আনতে চেয়েছেন। যত বেশি পড়ে, তত বেশি জানে, তত কম মানে। অ্যাস্টাব্লিশমেন্টের বিপদটা এখানেই। সত্যজিত রায় একথাই জানাতে চেয়েছেন হিরক রাজার বয়ানে। হিরক রাজা বলেন, বিদ্যা লাভে লোকসান, নাই অর্থ নাই মান। অর্থাৎ বই পড়াকে নিরুৎসাহিত করাকেই হিরক রাজা টিকে থাকার মন্ত্র হিসেবে নিয়েছিলেন। 

যাকগে, এসব আলোচনা থাক। অনেকে আবার বলবেন, ধান ভানতে শিবের গীত। তারচেয়ে মানুষ নিখোঁজ না হোক। নিখোঁজ যারা তারা ফিরে আসুক। নিখোঁজ সন্তানের সন্ধানে আহাজারির খবর তো প্রতিনিয়ত দেখছি। নতুন করে খবরে দেখলাম, বাবা-মা ছেলের কবর খুঁজে বেড়াচ্ছেন। এই অবস্থার অবসান হোক। কেউ অপরাধ করলে আইনানুযায়ী আদালতে সোপর্দ করা হোক। বিচারের স্বাভাবিক ও স্বীকৃত প্রক্রিয়া চালু থাকুক। সাথে বইমেলাসহ যে কোনো সৃষ্টিশীল কর্মকাণ্ডে মুক্তমতের চর্চা অব্যাহত থাকুক। ভিন্নমত বলে যেন কাউকে হেনস্তা না করা হয়। এই তো, আপাতত তো এই চাওয়াই। 

কাকন রেজা : লেখক ও সাংবাদিক। 

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
Page rendered in: 0.1579 seconds.