• ২৮ মার্চ ২০২৩ ১৮:৪২:৫৭
  • ২৮ মার্চ ২০২৩ ১৮:৪২:৫৭
অন্যকে জানাতে পারেন: Facebook Twitter Google+ LinkedIn Save to Facebook প্রিন্ট করুন
বিজ্ঞাপন

হিরো আলম, রুচির দুর্ভিক্ষ ও দুর্ভিক্ষের কারণ

ছবি : সংগৃহীত

কাকন রেজা:

আমাদের মুশকিল হলো আমরা সবাইকে প্রায়শ ‘বুদ্ধিজীবী’ বানিয়ে ফেলি। সে হোক অভিনেতা, গাইয়ে কিংবা নাচিয়ে। এমনকি কোনো খেলোয়ারও জাতির উদ্দেশ্যে বয়ান দেন। না, বলছি না, তারা বুদ্ধিবৃত্তিতে থাকতে পারবেন না, কিন্তু সেলিব্রেটি মানেই ‘বুদ্ধিজীবী’ নন, সেটা ভাবতে হবে। দু’একটি বই লিখলেও ‘বুদ্ধিজীবী’ হওয়া যায় না। কিন্তু আমরা বানিয়ে ফেলি। এর পেছনের কারণটা রাজনৈতিক। আমাদের দেশের সবকিছু্ই প্রায় রাজনীতি নিয়ন্ত্রিত। অন্যার্থে ক্ষমতা নিয়ন্ত্রিত। যারা যখন ক্ষমতায় আসেন, তারা তখন নিজ বলয়ের মানুষদের প্রতিষ্ঠিত করতে থাকেন এবং তা প্রোপাগান্ডার মাধ্যম। সেলেব্রেটিরাও সেই ধারাবাহিকতায় ‘বুদ্ধিজীবী’ হয়ে ওঠেন। তার কৌশলটা হলো গণ ও সামাজিকমাধ্যমে তাদের ঘন ঘন মানুষের সমুখে আনা। তাদের মুখকে পরিচিত করা। চলতি বিষয়ে তাদেরকে কথা বলার সুযোগ করে দেয়া। একটা স্থুল উদাহরণ হলো বাটপার শাহেদ। যিনি রীতিমত টক শো তারকা হয়ে উঠেছিলেন।

হিরো আলমকে নিয়ে কথা হচ্ছে। বলা হচ্ছে রুচি বিকৃতি কিংবা দুর্ভিক্ষের কথা। দুর্ভিক্ষ শব্দটির আভিধানিক অর্থ হচ্ছে, ভিক্ষার অভাব। যারা বা যিনি বলছেন, তারা বা তিনি কি বুঝতে পারছেন, অভাব শব্দটি তাদের ব্যতিরেকে নয়। তারা কি বুঝতে পারছেন, হিরো আলম কেন এতটা উঠে এসেছেন। তাদের ‘বুদ্ধিজীবী’ হয়ে ওঠার বিপরীত প্রক্রিয়া হলো ‘হিরো আলম’। হিরো আলম মূলত অ্যান্টি-হিরোদের বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষের প্রতিবাদ। যারা সাধারণ মানুষের চিন্তা এবং তাদের চাওয়া সর্বোপরি তাদের সংস্কৃতিকেই বুঝতে পারেননি। উল্টো সাধারণ মানুষের চিন্তা ও সংস্কৃতির বিপরীতে এক উল্টো সংস্কৃতি জোর করে চাপিয়ে দেয়ার চেষ্টা করেছেন। তাদের সেই উল্টো পদযাত্রার স্যাটায়ারিক প্রতিবাদই হলো ‘হিরো আলম’। অ্যান্টি-হিরোদের বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষের লিখা এক দেয়াল লিখন, গ্রাফিতি। শারীরিক ভাবে সম্পূর্ণ মানুষ থাকতেও একজন অসম্পূর্ণ তৃতীয় লিঙ্গের মানুষকে যে কারণে ভোট দেয়ার সুযোগ পেলে বিজয়ী করে আমজনতা। হিরো আলমও হয়তো বুদ্ধিবৃত্তিতে অসম্পূর্ণ। তবে তিনি সৎ। তিনি স্বীকার করেন তিনি অভিনয় পারেন না, গান জানেন না। তিনি যে পারেন না, জানেন না এটুকু বলার সততা তার আছে, কিন্তু আমাদের সেই ‘বুদ্ধিজীবী’দের সেটুকুও নেই।  

আজকে বলা হচ্ছে, মানুষ প্রতিবাদ করতে ভুলে গেছে। এমন কথা স্বার্থে আঘাত লাগলে এখন অনেকেই বলেন। যারা বলেন, তাদের যদি প্রশ্ন করা যায়, এর জন্য দায়ী কে বা কারা? কী জবাব দেবেন সেই ‘বুদ্ধিজীবী’গণ? জবাব আছে কি? নেই। কেন নেই তার জবাব তাদের কর্মকাণ্ডেই রয়েছে। কথা পরিষ্কার, অন্ধের অন্যকে পথ দেখানোর জো নেই। মতান্ধতার কাছে চোখের অন্ধত্ব কিছুই নয়। ডগমাটিজমে আক্রান্ত মানুষ শুধু চোখে নয় মগজেও অন্ধ। অচল। আর দুর্ভিক্ষটা সে কারণেই।

কাকন রেজা : লেখক ও সাংবাদিক।

সংশ্লিষ্ট বিষয়

দুর্ভিক্ষ

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
Page rendered in: 0.1511 seconds.