• ২১ মে ২০১৭ ১২:৪৬:৫৯
  • ২১ মে ২০১৭ ১২:৪৬:৫৯
অন্যকে জানাতে পারেন: Facebook Twitter Google+ LinkedIn Save to Facebook প্রিন্ট করুন
বিজ্ঞাপন

ব্যঙ্গমা-ব্যঙ্গমী

আকাম-কুকাম মন্ত্রণালয় হইব!

.


আফসান চৌধুরী


র‌্যাব বহু তোড়জোড় কইরা কিছু মানুষরে কেরানীগঞ্জে ধরছে। র‌্যাব কইতাছে, এরা হইতাছে সমকামী। ক্যান কইতাছে? কইতাছে এই কারণে, হেগো কাছে মলম, পাউডার আরো কী কী জানি পাওয়া গ্যাছে। তাই হেগো ধরছে, চালান দিছে। আবার পত্রিকাতেও খবর পাঠাইছে। পাবলিক যারপরনাই খুশি। কারণ, র‌্যাবের তো একটাই কাম। দেশে এত বড় শত্রু সমকামীরা, হেদের ২০টারে ধইরা ফালাইছে। এহন দেশ ও জাতি শান্তিতে ঘুমাইতে পারব এবং র‌্যাবেরে সালাম দিব দুই বেলা।

২. আমাদের মন্ত্রী মহোদয়ের সালাম। তয় কিনা একখান কথা, আপনি এদিন আমাদের বুঝাইছেন যে জঙ্গিরা হইতাছে দ্যাশের প্রধান শত্রু। সেই মতে আপনারে আমরা সমর্থন দিছি, নাড়া দিছি,  লিখছি, কইছি। এহন হঠাৎ কইরা দ্যাখতাছি, দেশের প্রধান শত্রু খতম বাহিনী জঙ্গি ফালাই দিয়া পোলাপান সমকামী ধরতাছে। তা ভাই আগে কইলেন না ক্যান? আমরা শত্রুই চিনবার পারলাম না! আমগো মনে এত দুঃখ দিছেন আপনে? আমরা এত সেমিনার করছি,  আর এহন কইতাছেন অন্যদের কথা।

এই পোলাপানগুলার মধ্যে দুই-একটা আত্মঘাতী সমকামী পাইছেন?  এদের কাছে বোমা আছিল? নাকি যেইডা আছে হ্যাগোর কাছে,  হেইডা দিয়া কাম করণ যায়, আত্মহনন করণ যায় না। 

৩. র‌্যাব বানাইছিল বেগম খালেদা জিয়া। তার পরে ধইরা ধইরা শত্রু ফালাইছে আর ঢুকাইছে। হের দোকানের নাম আছিল ‘অপারেশন ক্লিনহার্ট’। সেই যে শুরু হইছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এহন সেইডারে তুঙ্গে লইয়া যাইতাছে। হিসাব কইরা দ্যাহেন, আমাগো ইতিহাসে  দুজনে মিল্যা খুব কম কাম করছে? তার মধ্যে কোনোটাই টেকে নাই। যেটা টিকছে হের নাম র‌্যাব। তার মানে হইতাছে, র‌্যাবই আওয়ামী লীগ আর বিএনপিরে এক জায়গায় রাখতে পারে। এইবার বুঝলেন, র‌্যাব কত গুরুত্বপূর্ণ! হেরা না থাকলে কিছুই থাকব না।

৪. বাংলা ভাই দিয়া এই জঙ্গি মোজেজা শুরু করছেন বেগম খালেদা জিয়া। দু-পাঁচটারে ঝুলাইছেন। হেরা কিছু দিন রেস্টে আছিল। তারপরে আবার আইছে। কিন্তু র‌্যাব তার কাম কইরা যাইতাছে পুলিশের লগে, শত্রু নিধন করতাছে। জনগণ খুবই খুশি। ক্যামনে কী হইছে হেইডা দেহনের কাম নাই আমাগো। দেইখাও কোনো লাভ নাই। আপনারা শত্রু ফালাইতাছেন, জঙ্গি ধরতাছেন, মারতাছেন- পাবলিক হাততালি দিতাছে। হেইডা বুঝলাম। কিন্তু সমকামী ধরনের ধাঁধাটা ধরতে পারি না। তা ভাই আগে কন নাই ক্যান? আমগো চারদিকে কত আকাম-কুকাম করা মানুষ আছে। হেগো লিস্টি দিয়া দিতাম। আপনারা ধরতেন, সাফা করতেন। আমরা খুশি হইতাম, দেশ ও জাতি বাঁচত।  

৫. তবে সরকার বইসা নাই। সরকার এহন আকাম-কুকাম মন্ত্রণালয় প্রতিষ্ঠার কথা চিন্তা করতাছে। হের কাম হইব, আকাম-কুকাম নিয়ন্ত্রণ করা। এই সবের কথা শুনলেই পুলিশ-র‌্যাব হেগো পাকড়াও করব। আকাম-কুকামের জন্য গঠিত বিশেষ আদালতে হেগো সোপর্দ করা হইব।

এহন বুঝতাছি, বিশাল নীতি তৈরি হইছে, যাতে মনে হয় এই সরকার এহন মানুষের আকাম-কুকাম লইয়া অনেক বেশি চিন্তা করতাছে। রেইন ট্রি হোটেল, আপন জুয়েলার্স, তিন ধর্ষক চোখে আঙুল দিয়া দেহাই দিছে, আকাম-কুকাম করলে পুলিশ কেইস না লইতে পারে। কিন্তু সরকার আকাম-কুকামের পক্ষে নাই। তাই এই সমকামী ধরছে।   

৬. সেই সঙ্গে নতুন একটি সংগঠন প্রতিষ্ঠা হইব। হের নাম হইব ‘নৈতিকতা লীগ’। শুধু সমকামী না, হেরা মদ-গাঁজা, ঘুষ, পরকীয়াসহ ব্যাবাক কামের পিছে লাগব।

৭. অবশ্য জাতীয় পার্টির প্রধান এইচ এম এরশাদ তীব্র আপত্তি করছেন। তাঁর দাবি, আকাম-কুকাম আদালতে পুরান কেইস লওন যাইব না। ‘এহন আমি ইসলামী এক্যজোট করতাছি এবং আকাম-কুকাম মন্ত্রণালয়ের বিশেষ উপদেষ্টা। এই সম্পর্কে আমার যথেষ্ট জ্ঞান আছে, দায়িত্ব পালনে তাই অবহেলা হইব না।’

সমকামী ধইরা প্রমাণ হইল, কাম-কাজে হেরা ভালো। তাই এহন দেশ নিশ্চিন্ত। জনগণ শান্তিতে ঘুমাইতাছে। জঙ্গির যুগ শ্যাষ, আকাম-কুকামের যুগ শুরু!  

লেখক : সাংবাদিক ও গবেষক।    

সংশ্লিষ্ট বিষয়

আফসান চৌধুরী

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
Page rendered in: 0.1585 seconds.